তাঁর কোনো ব্যবসা নেই। চাকরিও নেই। তবু ব্যাংক হিসাবে আছে ৮৩ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম শহরে রয়েছে ফ্ল্যাট ও জমি। রবিউল আলম নামের এই যুবক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। পুলিশ বলছে, ইয়াবা ব্যবসা করে তিনি এত বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ইয়াবা উদ্ধারের একটি মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনার সন্ধান পায়।
Eprothom Alo১০ মাস আগে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ স্টিকার ও ভিআইপি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ডযুক্ত একটি পাজেরো গাড়ি থেকে অর্ধ লাখ ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। মামলাটি বর্তমানে পিবিআই তদন্ত করছে। তদন্তে উঠে আসে রবিউলের নাম। এরপর থেকে পলাতক রয়েছেন এই যুবক।
কক্সবাজারের টেকনাফ সদরের নাজিরপাড়ার ছেলে রবিউল পড়তেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। এই পরিচয়ের আড়ালে করতেন ইয়াবা ব্যবসা। থাকতেন চট্টগ্রাম শহরে। টেকনাফ থেকে পাঠানো ইয়াবাগুলো চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতেন।
গত বছরের ২৫ মার্চ কর্ণফুলী থানার ফকিরনীর হাট এলাকায় একটি পাজেরো থামার সংকেত দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। চালক তখন পাজেরো ফেলে পালিয়ে যান। গাড়ির ভেতর থাকা জসীম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় কর্ণফুলী থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে ডিবি পুলিশ। এই জসীম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, টেকনাফ থেকে ইয়াবাগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র রবিউলের আরেক ভাই ফরিদুল পাঠাতেন। আর চট্টগ্রামে গ্রহণ করে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঠাতেন রবিউল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে সরকারি পাজেরো গাড়ি ব্যবহার করেন পাচারকাজে।
ঘটনার শুরু থেকে মামলাটি তদন্ত করেন নগর ডিবি পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান। রবিউলসহ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তিনি। কিন্তু গাড়িটির চালকসহ পাচারে জড়িত পাঁচজনকে শনাক্ত করতে না পারায় পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। বর্তমানে কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র পরিচয়ের আড়ালে রবিউল ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে ধরা যায়নি।
পুলিশ সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে পুলিশ রবিউলের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পায়। টেকনাফে একটি বেসরকারি ব্যাংকে তাঁর হিসাব রয়েছে। ২০১৫ সালের ২৮ মে খোলা এই হিসাবে সর্বশেষ লেনদেন হয় গত বছরের ২৬ এপ্রিল। ওই হিসাবে তাঁর জমা টাকার পরিমাণ ৫৩ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আয়ের উৎস দেখানো হয়েছে জমির ব্যবসা। একই ব্যাংকে তাঁর আরেকটি হিসাব রয়েছে। এখানে জমা টাকার পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা। তাঁর স্কুলপড়ুয়া ভাইয়ের স্কুল ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এখনো তদন্ত চলছে।
মামলাটির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক নুর আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, রবিউলকে গ্রেপ্তার করা গেলে ব্যাংক হিসাবের বাইরে তাঁর নামে-বেনামে থাকা আরও টাকা ও সম্পত্তির হদিস পাওয়া যাবে। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রামের বাড়ি টেকনাফে খোঁজ নিয়ে রবিউল ও তাঁর পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িটি এখন ফাঁকা।
ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকায় রবিউলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান আমির মুহাম্মদ নসরুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।