ভোলার চরআইচা হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ফরহাদ হোসেন ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। সুপার হওয়ার পাঁচ বছরের মধ্যে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে ২৯ লাখ টাকার দুর্নীতি ও মাদ্রাসা ফান্ড থেকে আট লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া এসব বিষয়ে হিসাব চাইলেই শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের চাকরিচ্যুতি ও মামলার হুমকি দেন তিনি। এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে দুটি অভিযোগ করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির প্রতিনিধিরা।
জানা যায়, ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে ফরহাদ হোসেন চরআইচা হোসাইনিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার হিসেবে যোগদান করেন। সুপার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য অ্যাডহক কমিটির কাগজ, ম্যানেজিং কমিটির কাগজ, স্বাক্ষর জালিয়াতি ও ভুয়া অভিজ্ঞতা সনদ দেখান তিনি। শিক্ষকদের বেতনের চার্টের আলোকে, ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসে তিনি সহকারী মৌলভি হন। নিয়ম অনুযায়ী, সহকারী মৌলভি হওয়ার ১২ বছর পর সুপার হওয়ার আবেদন করতে পারবেন। কিন্তু আগের মাদ্রাসার ভুয়া সনদ ব্যবহার করে সহকারী মৌলভি হওয়ার দুই বছর ১০ মাসের মধ্যে তিনি মাদ্রাসার সুপার হন। ওই সনদে তিনি সহকারী মৌলভি হওয়ার সাল দেখান ২০০২। মাউশির মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগে বলা হয়েছে, মাদ্রাসার উন্নয়নের নামে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ২৯ লাখ টাকার দুর্নীতি করেছেন। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক (সমাজ বিজ্ঞান) মো. মোজাম্মেল হকের নিয়োগ বাবদ দুই লাখ টাকা। লাইব্রেরিয়ান পদে মো. আওলাদ হোসেন থেকে (ইনডেক্স নং এম-০০১৪৩৪৮) ২০২০ সালে ১১ লাখ টাকা। আয়া পদে ফাহিমা বেগম (এম-০০১৫৬৪১) থেকে পাঁচ লাখ। নিরাপত্তাকর্মী মিরাজ (এম-০০৪১৩৮৭) থেকে পাঁচ লাখ। দপ্তরি পদে মো. আলম (এম-০০৯১৯৩) থেকে ছয় লাখ।
এ ছাড়া মাদ্রাসা ফান্ডের আট লাখ ৬০ হাজার টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। সাবেক সুপার অহিদুর রহমানের কাছে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা। জেলা পরিষদের ২০২০-২১ অর্থবছরের মাদ্রাসা উন্নয়ন খাতের দুই লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। মাদ্রাসার দশমিক ২২ শতাংশ জায়গা বিক্রির চার লাখ ৯৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি গঠিত ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত সভাপতি ১৭ নভেম্বর মারা যান। সভাপতির মৃত্যুর পর নতুন সভাপতি নিযুক্তিতে নীতিমালা তিনি মানেননি। ম্যানেজিং কমিটির নীতিমালায় উল্লেখ আছে, সভাপতির মৃত্যুর পর মাদ্রাসার সুপার সাত দিনের মধ্যে নতুন সভাপতি নির্বাচন করার উদ্দেশে সভার আহ্বান করবেন। কিন্তু নিজের পছন্দের সভাপতি না পাওয়ায় এক মাসের মধ্যেও তিনি সভার আহ্বান করেননি। চরআইচা হোসানিয়া দাখিল মাদ্রাসার ২০১৮ সালের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন আব্দুর রব মিয়া। ম্যানেজিং কমিটির সভা না করেই তাকে সভাপতি ঘোষণা করেন এ সুপার।
এ ব্যাপারে আব্দুর রব মিয়া জানান, সভাপতি মারা যাওয়ায় মাদ্রাসার সুপার মাওলানা ফরহাদ হোসেন আমাকে ম্যানেজিং সভাপতি করেছেন জানিয়ে, আমার কাছে স্বাক্ষর চেয়েছেন। তাই আমি স্বাক্ষর দিয়েছি। তবে আমাকে সভাপতি করা হয়েছে এই মর্মে প্রজ্ঞাপন বা অন্য কোনো কাগজ আমার হাতে এখনো আসেনি। চরআইচা হোসানিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. ফরহাদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলে হোক।
অভিযোগ কেন করা হচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমাজে মানুষের ক্ষতি করার মানুষের অভাব নেই। একটি শ্রেণী আমার ক্ষতি চায় তাই অভিযোগ করেছে। সভাপতির নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে সভাপতি করা হয়েছে।