নিজস্ব প্রতিবেদক
বিগত মন্ত্রিসভায় বিতর্কিত সমালোচিত একাধিক মন্ত্রী বাদ পড়েছেন। এই সমস্ত মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ উঠেছিল। তারা পুরো পাঁচ বছর মেয়াদী সরকারের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারও বিভিন্ন সময় সমালোচিত হয়েছিল। এই সমস্ত বিতর্কিত মন্ত্রীদেরকে মন্ত্রিসভায় এবার রাখা হয়নি। আজ রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন আগামী কাল যে মন্ত্রিসভা গঠিত যাচ্ছে, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেছেন। ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী এবং ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছে। এই মন্ত্রিসভায় গত মন্ত্রিসভার অনেক স্থান পেয়েছেন। তবে নানা কারণে সমালোচিত বিতর্কিতরা নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি।
যারা এই নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন, সেই আলোচিত সমালোচিত পাঁচ জন মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন;
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল: নানা কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আলোচিত সমালোচিত এবং বিতর্কিত ছিলেন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা রকম কথাবার্তা হচ্ছিল। মন্ত্রণালায়ে তার উপস্থিতি ছিল কম। তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুহূর্তেও তিনি অনেক নির্লিপ্ত এবং উদাসীন ছিলেন। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও তাকে অনুপস্থিত দেখা গেছে। ধারণা করা হয়েছিল যে তিনি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাবেন না। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পেয়েছেন বটে। এবার মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ড. এ কে আব্দুল মোমেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে নিয়ে গত পাঁচ বছরে নানা রকম সমালোচনা ছিল। লাগামহীন কথাবার্তা ও অকূটনৈতিক সুলভ বক্তব্য দিয়ে তিনি নানাভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন। সরকারকে অনেক বক্তব্য দিয়ে বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলেছিলেন। এবারের মন্ত্রিসভায় তিনি থাকবেন কি থাকবেন না এ নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা থেকে তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে না।
টিপু মুনশি টিপু: বিগত মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে সমালোচিত মন্ত্রীদের অন্যতম ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। টিপু মুনশির কারণে বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছিল। লাগামহীন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। আর সবকিছু মিলিয়ে তিনি একেক রকম কথা বলে জনগণের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার মন্ত্রিসভায় তার বাদ যাওয়াটা ছিল অনিবার্য। প্রধানমন্ত্রী টিপু মুনশিকে এবার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দিয়েছেন।
জাহিদ মালেক: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রিসভায় আরেকজন সমালোচিত ব্যক্তি ছিলেন। বিভিন্ন সময় তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ সরকারকে বিব্রত করেছিল। তার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল করোনা কালে। বিশেষ করে করোনার সময় কেনাকাটায় অনিয়ম, বিশৃঙ্খলার একটা চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছিল। এছাড়াও মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেও তিনি ডেঙ্গু মোকাবেলার সময় বিদেশে গিয়েছিলেন তথ্য গোপন করে। বছরজুড়েই তাকে নিয়ে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা ঝড় বয়ে যেত। এ রকম পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যখাতে তার সিন্ডিকেটের কথাও শোনা যেত। মন্ত্রিসভায় তার বাদ যাওয়াটা ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র।
আরও পড়ুন: ড. রাজ্জাকের বয়ান এবং আওয়ামী লীগের জবাবদিহিতা
ড. আব্দুর রাজ্জাক: মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন আরেক বিতর্কিত আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা ড. আব্দুর রাজ্জাক। আব্দুর রাজ্জাক ২০০৮ এর নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৪ তে তিনি মন্ত্রিত্ব পাননি। কিন্তু ২০১৮ সালে তিনি কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। আর কৃষিমন্ত্রী হিসেবে একদিকে যেমন কৃষির বাজার নিয়ন্ত্রণে তার ব্যর্থতা ছিল, কৃষি খাতে যে বিপ্লব বেগম মতিয়া চৌধুরী এনেছিলেন সেই বিপ্লব যেমন তিনি ধরে রাখতে পারেনি তেমনি নানা রকম বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য তিনি আলোচিত সমালোচিত হয়েছিলেন। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করার বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য সারা দেশে আলোচনার ঝড় তুলেছিল। অবশ্য সেই বক্তব্য তিনি প্রত্যাহার করেননি। বরং কৃষি মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তাকে দিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি তার বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়েছিলেন। এবার মন্ত্রিসভায় তার বাদ যাওয়াটা ছিল কাঙ্খিত