বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে। যদিও এই নির্বাচন বয়কট করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সেইদিনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরেই বিভিন্ন দেশের দূতরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন এবং অভিনন্দন জানান।
ভারত, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ অনেকে দেশের প্রতিনিধি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। এছাড়া রাশিয়া এবং চীনের রাষ্ট্রদূত হাসিনার সঙ্গে দেখা করে তাকে অভিনন্দন জানান।
তবে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনের সমালোচনা করেছে। উভয়দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে একমত যে, এই নির্বাচন অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।’
অন্যদিকে যুক্তরাজ্যও বলেছে, নির্বাচনের সময় সহিংসতা এবং ভয়ভীতির কার্যক্রম হয়েছে।
দেশ দুইটির এমন বিবৃতির পর গত মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ওগুলো নিয়ে আমাদের চিন্তা নেই। সব দেশই বলেছে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, একদিকে পশ্চিমাদের নিন্দা এবং অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার স্বাগত জানানোর এই বৈপরীত্য হাসিনার ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাব্য নাটকীয় বৈদেশিক নীতির ফলাফলের একটি বাতায়ন।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়ার এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঢাকার ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক, পশ্চিমের সঙ্গে এ দেশের সম্পর্ককে আরও তলানিতে নামাতে পারে। আর এটি অন্যদিকে বেইজিং ও মস্কোর সঙ্গে ঢাকার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে পারে।
ঢাকাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান বলেছেন, তার ধারণা নির্বাচন পরিচালনায় মূল ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বিধিনিষেধ এবং নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে।
কিন্তু এটি করলে ঢাকায় চীনের উত্থান ঠেকাতে মার্কিন কৌশল বিপন্ন হতে পারে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ চীনের অন্যতম বাণিজ্যিক পার্টনার।
অন্যদিকে রাশিয়া বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করতে সহযোগিতা করছে। ইতিমধ্যে গত অক্টোবরে রাশিয়া থেকে ঢাকায় ইউরেনিয়াম এসেছে। এছাড়া তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী মূল্যে বাংলাদেশে তিনটি প্রয়োজনীয় পণ্য- জ্বালানি, খাদ্যশস্য এবং সার-এর প্রধান সরবরাহকারীও রাশিয়া।
জাহেদ উর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমারা যদি বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে খুব জবরদস্তিমূলক বা দমনমূলক পন্থা অবলম্বন করে, তাহলে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দ্রুত বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেছেন, পশ্চিমারা একটি গুরুতর দ্বিধার সম্মুখীন হবে।
তবে তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ কার্যত একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। সরকার আরও দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আইন এবং আইনবহির্ভূত পদক্ষেপের মাধ্যমে যে কোনো ধরনের বিরোধী দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করবে।
প্রতিবেদন: আল-জাজিরা