নিজস্ব প্রতিবেদক।
শীতের সবজি বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে দামও কম থাকে। প্রতি বছর এই সময়ে প্রায় সব ধরনের সবজি ৫০ টাকার কমেই পাওয়া যেত। তবে এবারের বাজার পরিস্থিতি ভিন্ন। ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজিই মিলছে না। সেই সাথে বেড়েছে চাল-তেল ও গরুর গোশতের দাম। আলু-পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও সেটি এখনো নাগালের বাইরে। গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সম্প্রতি দেশে রেকর্ড পরিমাণে আমন ধান উৎপাদন হয়েছে। বাজারে সরবরাহেও কোনো ঘাটতি নেই। তবুও রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে চালের দাম।
রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, সরু (মিনিকেট) চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা দরে। যা সপ্তাহ দুয়েক আগে ছিল ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা। অর্থাৎ কেজিতে সর্বোচ্চ ৬ টাকা বেড়েছে। মাঝারি (বিআর-২৮, পায়জাম) চালের কেজিতে সর্বোচ্চ ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। এ ছাড়া কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে মোটা চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮, মাঝারি চাল প্রায় ৩ এবং মোট চালের দাম প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে।
সরকার নির্ধারিত দামকে উপেক্ষা করে বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে ১৭৩ টাকা বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। ৫ লিটারের বোতলের দাম ৮২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে। একই সাথে প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম ১০ টাকা এবং চিনির দাম বেড়েছে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটার দাম এখন ৬৫ টাকা। ময়দার দাম বেড়ে হয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা। চিনির দামেও একই ধরনের অস্থিরতা। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ১৪৮ টাকা মূল্য থাকলেও বিক্রেতারা সেটা খুলে বিক্রি করছেন ১৫০-১৬০ টাকায়।
চলতি মাসের শুরুতে সরকার নির্ধারিত ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল গরুর গোশত। কিন্তু এখন আর সেই দামে বিক্রি করছে না বিক্রেতারা। দুই দফায় ১০০ টাকা বাড়িয়ে এখন ৭৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছে বিক্রেতারা।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায় ও প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বেগুন প্রতি কেজি ৮০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, শালগম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঝিঙা প্রতি কেজি ৮০ টাকা, করোলা প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ক্ষিরাপ্রতি কেজি ৬০ টাকা, পেঁয়াজের ফুলকি প্রতি মুঠো ২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ৬০ টাকা, সাধারণ শিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, আর বিচিওয়ালা লাল শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, লাল আলু প্রতি কেজি ৭০ টাকা, গাজরপ্রতি কেজি ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও ব্রুকলি প্রতি পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি, যা গত সপ্তাহে ২১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক, সোনালি হাইব্রিড কক ও লেয়ার মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বাজারগুলোতে সোনালি কক ৩০০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ২৯০, দেশী মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ ও লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির গোশত কেজি প্রতি ১০৫০-১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, হাঁসের ডিম ২১০ ও দেশী মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকা।
বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ। বাজারগুলোতে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা, এক কেজি শিং মাছ (চাষের, আকার ভেদে) ৩০০ থেকে ৫০০, রুই মাছের দাম বেড়ে (আকার ভেদে) ৩৩০ থেকে ৫৫০, মাগুর মাছ ৫০০ থেকে ৭০০, মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, চিংড়ি ৬০০ থেকে ৮০০, বোয়াল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, কাতল ৩৩০ থেকে ৪৫০, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, তেলাপিয়া ২২০, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, কাচকি মাছ ৪০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ৮০০, বাইম মাছ ৬০০ থেকে ৮০০, দেশী কই ৮০০, শোল মাছ ৪০০ থেকে ৬০০, আইড় মাছ ৪০০ থেকে ৬০০ এবং কাইকলা মাছ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে