অনলাইন ডেস্ক
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার তিন সহকর্মীর বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেল জয়ীসহ মোট ২৪২ বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তৃতীয়বারের মতো খোলা চিঠি লিখেছেন।এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও রয়েছেন।
চিঠিতে বিশ্বনেতারা ‘ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রতারণা’ বন্ধের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
গতকাল সোমবার মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টে একটি পূর্ণ পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন হিসেবে চিঠিটি প্রকাশিত হয়। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সর্বশেষ এই চিঠি লেখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বলা হয়, ‘আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর চলমান হয়রানি ও সম্ভাব্য কারাদণ্ডের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে এই চিঠি লিখেছি। আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রচার ও সুরক্ষার জন্য জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক আইরিন খানের সঙ্গে ঐকমত্য জানাচ্ছি। তিনি ১ জানুয়ারি এই রায়কে ‘ন্যায়বিচারের সঙ্গে প্রতারণা’ বলে অভিহিত করেছিলেন। ওই রায়ে প্রফেসর ইউনূস সহ তার অলাভজনক সংস্থা গ্রামীণ টেলিকমের চার বোর্ড সদস্যের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ইউনূসের বয়স এখন ৮৩ বছর।
আমরা আরও লক্ষ্য করি যে, বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাদের দমন ও কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি গণমাধ্যম ও স্বাধীন কণ্ঠস্বরের উপর ক্র্যাকডাউন প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। যা বাংলাদেশ ও বিদেশের অনেক মানবাধিকার ও গণতন্ত্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো ব্যাপকভাবে নথিভুক্ত করেছে। প্রফেসর ইউনূসকে হয়রানি ও ভয় দেখানোর বিষয়ে এর আগের একটি চিঠির জবাবে আপনি একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন যে, চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের উচিত বিশেষজ্ঞ এবং আইনজীবী পাঠানো যাতে তারা নথিপত্র ঘেটে দেখতে পারেন যে এখানে কোনো অন্যায় হয়েছে কিনা।
আমরা আপনার এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করছি। এই পরীক্ষায় শুধুমাত্র শ্রম আইনের মামলাই নয়, বরং দুর্নীতি দমন কমিশনের বর্তমান তদন্তও অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। আমরা এই পর্যালোচনা পরিচালনার জন্য স্বাধীন আইনি বিশেষজ্ঞদের একটি ছোট দলের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য একজন সিনিয়র আন্তর্জাতিক আইনজীবীকে প্রস্তাব করতে চাই। আমরা অবিলম্বে এই কাজ শুরু করতে চাই। আমাদের অনুরোধ, প্রফেসর ইউনূস ও তার সহকর্মীদের যেকোনো কারাদণ্ড এই পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হোক।
আপনি জানেন, প্রফেসর ইউনূস ২৪টি দেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬১টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। ‘ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার’ ৩৯টি দেশের ১০৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি ১০টি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মানসহ ৩৩টি দেশ থেকে মোট ১৩৬টি পুরস্কার পেয়েছেন।
একই সঙ্গে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ইউনাইটেড স্টেটস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পেয়েছেন ইতিহাসে এমন সাতজনের মধ্যে একজন প্রফেসর ইউনূস। তিনি ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিকে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে ‘অলিম্পিক লরেল অ্যাওয়ার্ড’ এবং ২০২৩ সালে সৌদি আরবে বিশ্ব ফুটবল সামিট অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে তার কাজ বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশে জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে অবদান রেখেছে।
দারিদ্র্য হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন, বর্জ্য হ্রাস, স্বাস্থ্যসেবা এবং দরিদ্রদের জন্য শিক্ষার অগ্রগতিতে অবদান রাখার জন্য তার অব্যাহত সক্রিয় নেতৃত্বের অত্যন্ত প্রয়োজন। তাকে ভিত্তিহীন অভিযোগে কারাদণ্ড দিলে তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় ক্ষতির কারণ হবে। এসব কারণে বিশ্ব নেতারা প্রফেসর ইউনূসের সঙ্গে তার নিজ দেশের সরকার কেমন আচরণ করছে তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। অধ্যাপক ইউনূস এবং তার সহযোগীদের কারাদণ্ডের মুখোমুখি হওয়া উচিত নয়।
আমরা আপনাকে (শেখ হাসিনা) অবিলম্বে ‘ন্যায়বিচারের সঙ্গে এই প্রতারণা’র অবসান ঘটিয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিসহ মানবাধিকারের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
এর আগে গত বছরের মার্চ ও আগস্ট মাসেও একই ধরনের দুটি চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বনেতারা। প্রতিটি চিঠিতেই আগেরবারের তুলনায় বেশি সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছেন।ড. ইউনূসকে হয়রানি নিয়ে দ্বিতীয় দফার খোলা চিঠিতে ১০৮ নোবেল জয়ীসহ বিশ্বের ১৯০ জনের বেশি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন।