নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামীকাল ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাসব্যাপী শুরু হচ্ছে অমর একুশে বইমেলা। প্রাণের এই মেলা যেনো সাহিত্যপ্রেমী তথা বইপ্রেমীদের এক অন্যন্য তীর্থস্থান। সারা বছর লেখক-প্রকাশক ও পাঠকরা মুখিয়ে থাকেন এই মেলার জন্য। বইমেলাকে ঘিরে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিজুড়েই শাহবাগ, ছবির হাট, দোয়েল চত্বর, টিএসসিসহ পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি এক আনন্দমুখর পরিবেশের জন্ম দেয়। বইয়ের সঙ্গে আলিঙ্গণ, বইয়ের সঙ্গেই ভালোবাসা। সারা পৃথিবীতে আরও অনেক বইমেলা হলেও আমাদের বইমেলার সঙ্গে পার্থক্যটা হচ্ছে ভিন্ন এক আবেগের। কারন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে প্রাণের এই মেলার একটা ভিন্ন চেতনা কাজ করে। তাই তো এই মেলা বাঙালি জাতির এক চেতনাময় আবেগের মেলা। শুধু তাই নয়- প্রযুক্তির এই সময়ে বইয়ের এই মেলা প্রতিবছর না হলে বাংলা সাহিত্য আরও হুমকির মধ্যে পড়তো বলে সাহিত্যবোদ্ধাদের অভিমত। তারুণ্যের এই মেলবন্ধনের মেলা এবার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে বই বিক্রিতে এগিয়ে থাকবে বলে প্রকাশকরা আশা করছেন।
এবারের বইমেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
নানাবিদ কারনে এবারের মেলা ভিন্ন আবেদন সৃষ্টি করবে বলে লেখক-প্রকাশকের ধারণা। মেট্রোরেলের কারনে এবারের মেলায় দর্শনার্থী তথা পাঠকদের উপস্থিতি থাকবে চোখে পড়ার মতো। কেননা নির্বিঘ্নে যানজটহীন শহরের স্বস্তি বাহন মেট্রোরেলে করে বইপ্রেমীরা চলে আসবেন প্রাণের মেলা বইমেলায়।
আগামীকাল বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরই মেলার দ্বার সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকছে মেলার আয়োজন। এবারের মেলায় ৬৩৫ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ পেয়েছে ৯৩৭টি ইউনিট। এবার প্রকাশনা সংস্থা বেড়েছে ৩৪টি। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১২০ প্রতিষ্ঠানকে ১৭৩টি ইউনিট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭৬৪ ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে ৫১৫ প্রতিষ্ঠান।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও মেলাপ্রাঙ্গণজুড়ে স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণ, সাজসজ্জা এবং অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য মিস্ত্রিদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। আজও থাকবে স্টল নির্মাণসহ শেষ সময়ের গোছানোর কাজ। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে সাজ সাজ রব। হাতুড়ি বাটালের ঠুকঠাক শব্দ চারদিকে। বিভিন্ন প্রকাশনীর স্টল ও প্যাভিলিয়নের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে অনেক আগেই। এখন চলছে রং করা, সাজ-সজ্জা বাড়ানোর কাজ।
বই মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্থাপন করা হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা। এর পাশাপাশি পুলিশ-র্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে ওয়াচ টাওয়ার। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে তৈরি করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার টেণ্ডারও। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকছে।
মাসব্যাপী বইমেলার এবারও আয়োজক ও ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে বাংলা একাডেমি। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবারও প্রতিষ্ঠানটি স্টল তৈরি করাসহ বইমেলার সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে।
এর আগে ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমি বইমেলা এককভাবে আয়োজনের দায়িত্ব পালন করেছে। মাঝখানের ১৬ বছর তৃতীয় পক্ষ বা ইভেন ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানকে স্টল তৈরি করাসহ সব দায়িত্ব দেওয়া হলেও বাংলা একাডেমি শুধু মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এবার বাংলা একাডেমি নিজেরাই এই আয়োজন সম্পন্ন করছে।
এবার অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট এলাকাজুড়ে। এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে গ্রন্থমেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মেলার বাহির হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন অংশে মোট ৮টি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকছে। খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এবারের বইমেলা অধিবর্ষের বইমেলা। লিপ ইয়ারের বছর হওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাস এবার ২৯ দিনের। চার বছর পর আবারও বইমেলা একদিন বোনার হিসেবে পাচ্ছেন পাঠক তথা বইপ্রেমীরা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে রাত ৮টা ৩০ মিনিটের পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। আর ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন মেলা সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে বলে মেলা কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেন।