উত্তরায় বাসার ভেতর শিশু গৃহকর্মীর লাশ, সড়কে বিক্ষোভ

রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে এক শিশু গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই শিশু গৃহকর্মীর নাম বৈশাখী আক্তার (১২)। মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ১৮ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়ির ছয়তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করে।

তবে শিশুটির স্বজনরা ও এলাকাবাসী দাবি করছে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে এলাকাবাসী ওই বাড়িটির সামনের সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য ওই শিশুর লাশ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠিয়েছে। অপরদিকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই বাসার গৃহকর্তার নাম রিফাত ফেরদৌসকে আটক করেছে। রিফাত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি তার স্ত্রী ও এক শিশু সন্তানকে নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে বসবাস করেন।

গৃহকর্তা রিফাতের দাবি, ছুটির দিন হওয়ায় তিনি ও তার স্ত্রী মঙ্গলবার বিলম্বের ঘুম থেকে উঠেন। তখনও পাশের কক্ষে গৃহকর্মী বৈশাখী ঘুমাচ্ছিল। তাকে বারবার ডাকাডাকি করেও তোলা যায়নি। কক্ষের দরজা ভেতর থেকে লাগানো থাকায় কেউ ভেতরেও যেতে পারছিলেন না। এরপরই তিনি থানায় খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। তবে কি কারণে বৈশাখী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে তার কারণ তিনি বলতে পারেননি।

এদিকে শিশুটির পরিবার দাবি করেছে, বৈশাখী দুই মাস আগে রিফাতের বাসায় কাজ নেয়। বিভিন্ন সময়ে তাকে মারধর করা হতো। গৃহকর্তা বৈশাখীকে খুন করে গলায় ফাঁস দেওয়ার নাটক সাজিয়েছেন। শিশুটির মা জান্নাতুল বেগম বলেন, কয়েক দিন আগে বৈশাখীর দাদী মারা যায়। তখন তিনি মেয়েকে নিয়ে নওগাঁওয়ে গ্রামের বাড়ি যান। গত সোমবার ঢাকায় ফিরে মেয়েকে ওই বাসায় পৌঁছে দেন। দুপুরের পর শুনেন তার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার দাবি তার মেয়ে গলায় ফাঁস দেয় নি, তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

উত্তরা-পশ্চিম থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, তারা খবর পেয়ে রিফাতের বাসায় গিয়ে একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে বৈশাখীর ঝুলন্ত লাশ পান। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে বৈশাখী আত্মহত্যা করেছে বলে গৃহকর্তা দাবি করলেও পুলিশ গিয়ে দরজাটি ভাঙা অবস্থায় পেয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণভাবে বৈশাখীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এরপরও মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদন পাওয়া ছাড়া মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে না।

এদিকে স্থানীয় লোকজন জানায়, বৈশাখীর পরিবারটি বাউনিয়া এলাকায় থাকে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে স্বজনরা ওই বাসার সামনে ছুটে আসে। কিন্তু কাউকেই বাসার ভেতর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। ওই সময়ে মেয়েটির স্বজনরা রিফাতের বাসার সামনে কান্নাকাটি শুরু করে। তখন এলাকার লোকজন সেখানে গেলে বৈশাখীর পরিবারের লোকজন জানায়, মেয়েটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। এরপরই এলাকার লোকজন বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

আরও পড়ুন: চেন্নাইয়ের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে দিল্লী

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষোভকারীরা বৈশাখী যে বাসায় কাজ করতো সেখানে ইটপাটকেল ছুড়ে মারে। বাসার সামনে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জিনিসপত্র জড়ো করে ও টায়ার এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে তারা বাসাটির নিচতলায় রাখা একটি সাইকেল ও পরিত্যক্ত কিছু আসবাব বের করে তাতেও আগুন ধরিয়ে দেয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আগুন নেভাতে গেলেও বাধা দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা চলে যায়।

পুলিশের উত্তরা জোনের সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান বলেন, বৈশাখীর স্বজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এজন্য গৃহকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ওই ঘটনায় আপাতত অপমৃত্যু মামলা হবে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ