সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পিএমএলএন এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পিপিপি একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে যে- দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে তারা একসাথে কাজ করার পরিকল্পনা করেছে।
শেষ পর্যন্ত যদি তারা জোট সরকার গঠন করে, তাহলে সেটি ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে।
খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেয়া হয়েছে। তাই দলটির বেশিরভাগ প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন।
এর আগে, পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে খানের সমর্থকরা একত্রিত হলে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছিল পুলিশ।
পাকিস্তানের নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, দেশটির জাতীয় পরিষদের মোট আসনের মধ্যে ১০১টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
বিবিসির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিজয়ী এসব প্রার্থীদের মধ্যে ৯৩ জনই ইমরান খানের দল পিটিআইয়ের সমর্থক।
অন্যদিকে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ ৭৫টি এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ৫৪টি আসন পেয়েছে।
এই দল দু’টি অনাস্থা এনে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ২০২২ সালে একটি জোট গঠন করেছিল এবং গত অগাস্ট পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে।
করাচিভিত্তিক রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টও (এমকিউএম) এবারের নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে জয় পেয়েছে। তারা মোট ১৭টি আসন পেয়েছে। কাজেই জোট সরকার গঠনে এই দলটিও ভূমিকা রাখতে পারে।
অন্যদিকে, নির্বাচনে হেরে যাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন।
এ অবস্থার মধ্যেই আবার ইমরান খানের দল পিটিআই এবং নওয়াজ শরিফের দল পিএমএলএন- উভয়ই বলছে, তারা পাকিস্তানের পরবর্তী সরকার গঠন করতে চায়।
তবে এটা সত্যি যে- পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনের ফলাফল সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কারণ বেশিরভাগ পর্যবেক্ষক মনে করছিলেন যে- নির্বাচনে শরিফের দল পিএমএলএন বিজয়ী হবে। কেন না, দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর তার প্রতিই সমর্থন রয়েছে।
অন্যদিকে, খানকে দুর্নীতি থেকে শুরু করে অবৈধভাবে বিয়ে করার মতো অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এমনকি খানের দলের প্রার্থীদের নিজ দলের নির্বাচনি প্রতীকে পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হয়নি।
এখন সরকার গঠন করার জন্য একটি দলকে দেখাতে হবে যে- তাদের নেতৃত্বাধীন জোটের জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন রয়েছে।
পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ৩৬৬টি আসনের মধ্যে ২৬৬টি আসনের জনপ্রতিনিধি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন।
এর বাইরে ৭০টি সংরক্ষিত আসন রয়েছে, যার মধ্যে ৬০টি আসন নারীদের এবং ১০টি অমুসলিমদের।
বস্তুত, জাতীয় পরিষদে কোন দলের আসন সংখ্যা কত, সেটির উপরে নির্ভর করেই সংরক্ষিত এসব আসনের বণ্টন করা হয়ে থাকে।
তবে পাকিস্তানের নিয়ম অনুযায়ী, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জাতীয় পরিষদের সংরক্ষিত আসন বণ্টনে ভূমিকা রাখতে পারেন না।
এ অবস্থায় পিটিআই-সহ আরো কয়েকটি দল নির্বাচনের ফলাফলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, এবারের নির্বাচনে ভোট কারচুপি করা হয়েছে।
রোববার বিক্ষোভকারী রাওয়ালপিন্ডিতে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনের দিকে যেতে চাইলে তাদের বাধা দেয়া হয়।
তারা যেন কোনোভাবেই নির্বাচন কমিশন ভবনের দিকে যেতে না পারে, সেজন্য ভবনের ঢোকার রাস্তায় কাঁটাতার এবং বড় ট্রাক দিয়ে অবরোধ করে রেখেছিল পুলিশ।
ফলে বিক্ষোভকারীদের কেউই শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ভবন ঢুকতে পারেনি।
তবে কয়েক শ’ বিক্ষোভকারী আশপাশের রাস্তায় জড়ো হয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টার ধরে স্লোগান দিতে থাকে। এ অবস্থায় কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার পুলিশ তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এর আগে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছিল যে- সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এটি মূলতঃ একটি ঔপনিবেশিক যুগের আইন, যেটি জারি করার পর চারজনের বেশি লোকে একসাথে হতে পারে না।
এই নিষেধাজ্ঞাটি নির্বাচনের আগে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জারি রাখা হয়েছিল।
‘জাল ভোট’ নিয়ে উদ্বিগ্ন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান দলটির সমর্থকদের নির্বাচন কমিশন অফিসের বাইরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন।
পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, পিটিআই দাবি করেছে যে- কমপক্ষে ১৮টি আসনের ফলাফলের ক্ষেত্রে নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোট কারচুপি করেছেন।
শনিবার শরিফ, যার প্রতি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সমর্থন রয়েছে বলে মনে করা হয়, জোট সরকার গঠনে সহায়তা করার জন্য অন্যান্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এরইমধ্যে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে পিপিপির শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠকও করেছে।
এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান ‘দীর্ঘ সময়ের জন্য রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল’ হয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চ্যাথাম হাউস থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ডা. ফারজানা শেখ বিবিসিকে বলেছেন যে, খানের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরকার গঠনের অনুমতি দেয়া প্রায় অসম্ভব। অন্যদিকে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন যে- শরিফ এবং পিপিপির মধ্যে চুক্তির মাধ্যমে যেকোনো জোটই হবে ‘দুর্বল এবং অস্থিতিশীল জোট’।
এরইমধ্যেই পিটিআই সমর্থিত অন্তত ছয়জন প্রার্থী, যারা এবারের নির্বাচনে জিততে পারেনি, তারা নিজদের আসনের ফলাফল পরিবর্তনের জন্য আদালতে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
তাদেরই একজন ইয়াসমিন রশিদ, যিনি লাহোরে শরিফের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন।
তারা একটি নির্দিষ্ট ফর্মে নির্বাচনি ভোট কারচুপির অভিযোগ দাখিল করেছেন।
তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তারা কোনো রকমের অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন।
অন্যদিকে, ভোট কারচুপির অভিযোগের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করার জন্য নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগও একটি আইনি দল গঠন করেছে বলে জানা যাচ্ছে।সূত্র : বিবিসি