অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে এখনো ১৮ শতাংশ পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা গত অক্টোবরে ছিল ২১ শতাংশ। তবে দেশে এখনো খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম অতিরিক্ত বাড়ছে। যে কারণে খাদ্যবহির্ভূত খাতের চেয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হারও বেশি বাড়ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে এখনো মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার বেশি বাড়ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে গত ডিসেম্বরে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ডিসেম্বরের তুলনায় নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি কমেছে দশমিক ০৪ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। অর্থাৎ খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের চেয়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে খাদ্যপণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। এ কারণে নভেম্বরে মাসিক খাদ্য খরচের সাধারণ ঝুড়িতে জনপ্রতি খরচ ৭১ টাকা কমে ২ হাজার ৮৩৩ টাকা হয়েছে। অক্টোবরে এ খাতে খরচ ছিল ২ হাজার ৯০৪ টাকা। ফসল কাটার মৌসুম শুরু হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম এখন করোনা-উত্তর স্তরের চেয়ে ৪০ শতাংশ বেশি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে মোটা চালের দাম বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও আলোচ্য সময়ে মজুরি (কৃষি মজুরিসহ) বেড়েছে। তবে এখনো খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির চেয়ে মজুরি বাড়ার হার কম।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশে খাদ্যের সরবরাহ, উৎপাদন ও আমদানির তথ্যও দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য ও কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরা হয়েছে। সার খাতের দায় পরিশোধ করতে সরকার কর্তৃক বিশেষ বন্ড ছাড়ার প্রসঙ্গটিও এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশ কয়েকটি দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্যপণ্যের দাম এখনো ৫ থেকে ৩০ শতাংশ বাড়ছে। বৈশ্বিক মন্দা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে যখন এর প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে, তখন থেকেই ওই হারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। অনেক দেশে খাদ্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি কমলেও বাংলাদেশেও কমেছে, তবে ৫ থেকে ৩০ শতাংশের নিচে এখনো নামেনি। শ্রীলংকায় খাদ্যপণ্যের দাম আগে ৩০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। দেশটিতেও এখন বাড়ছে ২ শতাংশের কম। ভুটান, পাকিস্তান ও ভারতে খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির হার কমে এখন আবার বেড়েছে। কয়েক মাস ধরে এসব দেশে দাম বাড়ছে ৫ থেকে ৩০ শতাংশ হারে।
এদিকে বিবিএস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বরে মজুরি বেড়েছিল ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জানুয়ারিতে বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে কৃষি খাতে বেড়েছে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। ওই সময়ে মজুরি বাড়ার চেয়ে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি বেড়েছে।
এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং ও মনিটরিং ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে খাদ্যপণ্যের মজুত। ফলে সরবরাহও বেড়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরবরাহ বাড়ায় খাদ্যের মজুত আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। গত অর্থবছরে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪ কোটি ২৭ লাখ ৩২ হাজার টনের বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৪ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টন। অপচয়, পচন ও অন্যান্যভাবে নষ্ট হওয়া খাদ্য বাদ দিয়ে নিট উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৬১ লাখ ৯৭ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টন। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে গম ও চাল আমদানি করা হয়েছিল ২৪ লাখ ৪ হাজার টন। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছে ৩০ লাখ ২৮ হাজার টন। আমদানি বেড়েছে ৬ লাখ ২৪ হাজার টন বা ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে একই সময়ের ব্যবধানে কেনার পরিমাণ ১০ লাখ টন থেকে ১২ লাখ ৫৬ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। একই সময়ের ব্যবধানে সরবরাহ ১৫ লাখ ৭৯ হাজার টন থেকে বেড়ে ১৭ লাখ ৪৪ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে। তবে খাদ্যের সরবরাহ বাড়ায় মজুত সাড়ে ১৯ লাখ টন থেকে কমে সাড়ে ১৬ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। দাম নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারি পর্যায় থেকে খাদ্যের জোগান বাড়িয়ে সরবরাহ পরিস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে।