ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ যন্ত্রপাতির জীবনীশক্তি (লাইফটাইম) সর্বোচ্চ ৫-৬ বছর। এরপর চিপসসেট পরিবর্তন হয়। নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে আসে আরও উন্নত যন্ত্রাংশ। এ বিষয় মাথায় রেখেই প্রযুক্তিগত অবকাঠামো আপডেট করার সিদ্ধান্ত নেন দায়িত্বশীলরা। বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অপারেটর মিলিয়ে যে পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বহন করছে তাতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৬ টেরাবাইট সক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনা যেতে পারে-এমন অভিমত দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ দল। কিন্তু ফাইভজি প্রকল্পের আওতায় ২৬-এর পরিবর্তে ১২৬ টেরাবাইট ধারণ ক্ষমতার যন্ত্রপাতি কেনাকেটার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। সর্বোচ্চ ১৫ মিলিয়ন ডলার (১১০ টাকা হিসাবে ১৬৫ কোটি টাকা) খরচে যে কাজ করা সম্ভব, সেটা করতে প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার-অর্থাৎ ৩২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে যন্ত্রপাতি কেনার দুরভিসন্ধি করা হয়েছে। আর এই প্রকল্পে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৪৬৩ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-এই বাড়তি যন্ত্রাংশ কোনোদিন ব্যবহৃত হবে না। তাই যন্ত্রাংশের নামে খোলস সরবরাহ দিয়ে অন্তত ১৬১ কোটি টাকা লোপাটের ছক চূড়ান্ত করেছে চীনা কোম্পানির সঙ্গে দেশীয় একটি শক্তিশালী চক্র। চলমান ডলার সংকটের কারণে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এলসি খুলতে না পারায় টাকাগুলো এখনো ভাগবাটোয়ারা করে পকেটে তুলতে পারেনি চক্রটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করলেই ফাইভজি প্রকল্পের নামে অতিরিক্ত বিপুল এই অর্থ লোপাট ঠেকানো সম্ভব।
এদিকে দরপত্র আহ্বানের পর সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ও সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান পৃথক দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে চাপ দেন। অবৈধ চাপ উপেক্ষা করে তিনি দরপত্র বাতিল করে সংশ্লিষ্ট দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি লেখেন। প্রভাবশালীরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আসাদুজ্জামানকে স্ট্যান্ডরিলিজ করে অন্যত্র বদলির আদেশ দেন। গত বছরের ২০ নভেম্বর তার বরখাস্তসংক্রান্ত আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে ফাইভজি অবকাঠামো প্রকল্পের নামে ‘সাগর চুরি’র ছক চূড়ান্ত করার উল্লিখিত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।বিস্তারিত