রাজধানীর মিরপুরে শনিবার (১৬ মার্চ) দুই তরুণ অটোরিকশায় করে ফিরছিলেন। ঘড়িতে তখন সন্ধ্যা সাতটার মতো বাজে। হঠাৎ সাত-আটজন তরুণ তাদের রাস্তা রোধ করেন । তারপর জন মানুষের সামনেই তাদের কুপিয়ে আহত করা হলো। এ ঘটনার পর রাস্তার পাশে পড়ে রইলেন নির্জীব একজন। সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই দৃশ্য। তাতে যা দেখা যায় তা সিনেমার দৃশ্যকেও যেনো হার মানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নিহত তরুণের নাম মো. ফয়সাল (২৫)। তিনি পল্লবীর মুড়াপাড়া বিহারি ক্যাম্পের বাসিন্দা। পেশায় তিনি কারচুপি কারিগর। আহত হয়েছেন তার বন্ধু রাশেদ। পুলিশ বলছে, এক নারীর সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তরুণকে খুন করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে।
পুলিশ ও নিহত ফয়সালের স্বজনেরা জানান, শনিবার সন্ধ্যায় ফয়সাল তার বন্ধু রাশেদকে নিয়ে মিরপুর ১২ নম্বরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার পার্টিতে যান। সেখান থেকে তারা অটোরিকশায় করে বাসায় ফেরার সময় হামলাটি হয়। ঘটনার সময় রাস্তায় অনেক মানুষ ছিলেন, দোকানপাট খোলা ছিলো, যানবাহনও চলছিলো।
সিসিটিভি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, দুর্বৃত্তরা অটোরিকশার গতিরোধ করে দুই তরুণকে নামিয়ে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে একজনকে রাস্তার একদিকে নিয়ে যায়। আরেকজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সি ব্লকে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিহত ফয়সাল সপরিবার মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুড়াপাড়া বিহারি ক্যাম্পের ই ব্লকে থাকতেন। ফয়সালের প্রতিবেশী তানজিলা আক্তার নামের এক নারীর সঙ্গে তার বিরোধ ছিলো। ফয়সালের পাশের বাসায় তার বান্ধবী থাকেন। কিছুদিন পর ফয়সালের সঙ্গে তার বান্ধবীর বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো।
আরো জানা গেছে, তিন দিন আগে তানজিলার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে তার বান্ধবীকে নিয়ে গান গেয়েছিলেন ফয়সাল। তানজিলা ধরে নেন তাকে ব্যঙ্গ করে ফয়সাল গান গেয়েছেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এর জের ধরে ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই বিষয়ে তাদের মধ্যে আবার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তানজিলার গায়ে ফয়সাল একটি লাঠি ছুড়ে মারেন। দুজনের মধ্যে আবার হাতাহাতি হয়।
এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিহত ফয়সালের বন্ধু রাশেদ বলেন, এই বিরোধ থেকেই তানজিলার স্বামী আকাশ, তার বন্ধু কাল্লু মিয়া ও তানজিলার বড় ভাই শাহীনসহ আটজন তাদের ওপর হামলা করেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্লবী অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজুমল হাসান জানান, হত্যায় আটজন অংশ নেন। আটক হওয়া দুজনকে নিয়ে অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পুলিশ বলছে, আটক হওয়া দুজনের মধ্যে একজন সরাসরি হত্যায় অংশ নেন। তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় রবিবার সকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক মোখলেছুর ।
পুলিশ কর্মকর্তা নাজমুল হাসান ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, পথচারীরা রক্তাক্ত অবস্থায় ফয়সাল ও রাশেদকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়। সেখান থেকে তাদের রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক ফয়সালকে মৃত ঘোষণা করেন।
ফয়সালের বাবা শাহাদত হোসেন বলেন, তানজিলার স্বামী আকাশ ও ভাই শাহীন তার নিরপরাধ ছেলেকে খুন করেছেন। তিনি তার ছেলে হত্যার বিচার চান।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ১৬ মে রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ৬ বছর বয়সী শিশুসন্তানের সামনে যুবক সাহিনুদ্দিনকে (৩৩) কুপিয়ে খুন করা হয়েছিলো। ওই ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) বলেছে, লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ আউয়ালের ইন্ধনে খুনটি করা হয়েছিলো।
এদিকে এম এ আউয়াল ইসলামী গণতন্ত্রী পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি খুনের মামলায় জামিনে রয়েছেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি ‘প্রগতিশীল ইসলামী জোট’ নামে একটি রাজনৈতিক জোট গঠন করেন। জোটের নেতারা বলেছিলেন, তারা সরকারের সঙ্গে থাকতে চান।
পিবিআই, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও র্যাব সূত্র তখন জানিয়েছিল, এই হত্যাকাণ্ড-সংশ্লিষ্ট একটি অডিও ক্লিপ তাদের হাতে আসে। সেখানে শোনা যায়, হত্যাকারীদের একজন আউয়ালকে ফোন করে বলছেন, ‘স্যার, ফিনিশ।’
তখন ওই ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিলো। তাতে দেখা যায়, দুই যুবক চাপাতি দিয়ে সাহিনুদ্দিনকে কোপাচ্ছিলেন।