ইউসুফ সোহেল,জনি রায়হান ;এসএসসি পরীক্ষা শেষে আপন বড় ভাইয়ের কাছে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিল বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার এক ছাত্রী। রাজধানীর কাফরুল থানা এলাকার মিরপুর-১৩ নাম্বারের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তার বড় ভাই রাজিব হোসেন। তিনি নিজেও একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। কিন্তু বড় ভাইয়ের বাসায় থাকাকালীন একই ভবনের বাসিন্দা দুই বাস চালকের কু-নজর পড়ে ওই ছাত্রীর ওপর। তারা দুজনে প্রথমে প্রেমের প্রস্তাব দেয় ওই ছাত্রীকে।
প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই ছাত্রীকে নানাভাবে বিরক্ত করে এবং কু-প্রস্তাব দিতে থাকেন দুই বাসচালক। কিন্তু কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না, তখন বাংলা সিমেনার ভিলেন স্টাইলে দুই বাসচালক মিলে হামলা চালায় ওই ছাত্রীর ওপর। শারীরক নির্যাতনের পাশপাশি যৌন নির্যাতনও করেন তারা।
ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার বিকেলে মিরপুর-১৩ নাম্বার এলাকার ৭ নাম্বার সড়কের ২৪ নাম্বার বাসায়। ঘটনার পরে দুই বাসচালককে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন ওই ছাত্রীর বড় ভাই রাজিব হোসেন।
মামলায় অভিযুক্ত ওই দুই বাস চালকের নাম মো. আবু হানিফ (২৯) ও মো. মানিক (২৮)।
যেভাবে দুই বাসচালকের সঙ্গে পরিচয় হয় ওই ছাত্রীর
ঘটনা সম্পর্কে ওই ছাত্রীর বড় ভাই রাজিব হোসেন বলেন, ‘আমি প্রায় দেড় বছর ধরে এই বাড়ির সাত তলায় ভাড়া থাকি। আমার আপন এক বোনও আমার সাথেই এখানে থাকে। আর আমার ছোট বোনটি বাবা-মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকে। তবে মাঝে মধ্যে সে ঢাকায় আমাদের কাছে বেড়াতে আসত। এবারও এসএসসি পরীক্ষা শেষে মাত্র ১০ দিনের জন্য আমাদের কাছে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিল। আর ওই দুই বাসচালক মানিক এবং হানিফ আমার ভবনের সাত তলাতেই অন্য ঘরে ভাড়া থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু আমার ছোট বোন আগেও এসেছিল, আর মানিক-আবু হানিফ আমারা পাশপাশি ভাড়া থাকি তাই আগে থেকেই তারা আমার বোনকে চিনে। একইসঙ্গে আমার বোনও ওদেরকে চেনে। তবে কিছু দিন আগে থেকে মানিক ও হানিফ আমার বোনকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল।’
বাসচালকদের আগেও সতর্ক করেছিল ওই ছাত্রীর ভাই
নিজের বোনের কাছে থেকে কিছু দিন আগে রাজিব হোসেন জানতে পারে যে, ওই দুই বাস চালক তার বোনকে নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে। এমন ঘটনার পরে রাজিব নিজে দুই জনের সঙ্গে কথা বলে তাদের সতর্ক করে দেয়।
রাজিব বলেন, ‘কিছু দিন আগে আমার বোনের মোবাইল নাম্বারে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল মানিক। এরপরে আমি তাকে ডেকে সাবধান করে দেই। হানিফও একইভাবে বিরক্ত করছিল। ওদের অত্যাচারে আমি একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে এই বাসাটি ছেড়ে দিব। অন্য এলাকায় গিয়ে বাসা নিব। কিন্তু সুবিধামত বাসা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’
অন্যের রুমে আটকিয়ে আবারও প্রেমের প্রস্তাব, অতঃপর নির্যাতন
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল ৫টার দিকে ওই ছাত্রী তার মোবাইল ফোন চার্জ দিতে সুজন নামের এক ব্যক্তির রুমে দিক যাচ্ছিল। এ সময় রুমের বাইরে থেকে মামলার এক নম্বর আসামি বাসচালক মানিক ওই ছাত্রীকে ধাক্কা দিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকায়। তখন দুই নাম্বার আসামি আবু হানিফ দ্রুত দৌড়ে গিয়ে বাইরে থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়। বন্ধ ঘরের মধ্যে সুজন নামক ওই ব্যক্তির সামনেই মানিক বার বার ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু ওই ছাত্রী তাতে রাজি না হওয়ায় মানিক তাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। সে সময় তাকে প্রচণ্ড মারধর করে মানিক। তখন ওই ছাত্রীর চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জড়ো হওয়া শুরু করলে মানিক এবং আবু হানিফ দ্রুত দরজা খুলে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু মানিক পালাতে পারলেও আবু হানিফ পালাতে পারেনি।
এক বাস চালক রিমান্ডে, অপর জনকে খুঁজছে পুলিশ
এই মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাফরুল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এস এম আল মামুন বলেন, ‘ঘটনার পরে আবু হানিফ নামের এক বাস চালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ তাকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। পরে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।’
এসআই আরও বলেন, ‘এই ঘটনার এক নাম্বার আসামি মানিক ঘটনার পর থেকেই পলাতক। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আর প্রাথমিক তদন্তে বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গেছে যা যাচাই-বাছাইয়ের করা হচ্ছে। তবে মানিককে গ্রেপ্তারের পরে ঘটনাটির আরও বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে।’