মির্জা মেহেদী তমাল
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রথমে প্রেমের সম্পর্ক, এরপর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদ তৈরি করতেন তিনি! একে একে তিনি বেশ কয়েকজন নারীকে ফাঁদে ফেলেন। মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতে থাকেন সেই সব নারীদের কাছ থেকে। এক পর্যায়ে তিনি এই কাজটিকে পেশা হিসেবে নেন। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজধানীর রায়েরবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে। তার নাম আলামিন ফাহিম। বাবার নাম গিয়াস উদ্দিন। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। ফাহিম নিজেকে একজন প্রাক্তন বুয়েটিয়ান, অ্যাপল কোম্পানির নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ হতে পিএইচডি করা এবং কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলত। এসএসসি পাস ফাহিম অন্তত ৫০ জন নারীকে ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর র্যাবের হাতে ধরা পড়ে। আলামিন ফাহিম নিজেকে মাহবুব সালাম ফাহিম নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য দিয়ে আইডি খোলেন। তার মাধ্যমে তিনি মেয়েদের সঙ্গে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বন্ধু হিসেবে নেয়। সেই মেয়েকে নানা মিথ্যা বলে প্রথমত প্রেম ও পরে বিয়ের প্রলোভন ও ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নেয়। এভাবে বিভিন্ন তরুণীদের কাছ থেকে ধারাবাহিকভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। তার এমন অপকর্মের শিকার ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী র্যাবের কাছে অভিযোগ করে। দীর্ঘ এক মাসের বেশি তদন্ত করে র্যাব ফাহিমকে গ্রেফতার করে।
ফাহিমের প্রতারণার শিকার এক তরুণী জানান, চার মাস আগে ফেসবুকে ফাহিমের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাদে প্রথমে তাদের মাঝে প্রেম ও পরে ফাহিম তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ফাহিম মেয়েটিকে জানায়, দীর্ঘদিন সুইজারল্যান্ডে প্রবাসে থাকায় বাংলাদেশে তার ৬টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে আছে। যে কারণে তার কাছে কোনো নগদ টাকা নেই, এমনকি সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত ও চোখে জখমের উন্নত চিকিৎসার খরচও নেই। এমন প্রতারণামূলক ছলচাতুরির মাধ্যমে ফাহিম ওই তরুণীর কাছ থেকে তিন ধাপে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টের (আল আমিন) মাধ্যমে প্রায় আট লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
র্যাব জানতে পারে, ফাহিম (আল আমিন) নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে তার প্রতারণার শিকার তরুণীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। একটি ফেসবুক আইডি হতে বিভিন্ন সময় মেয়েদের প্রতারিত করে এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছে। সে নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন মেজর জেনারেলের ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকে। এই পরিচয়ে সে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্রও তৈরি করে। ফাহিম নিজেকে একজন প্রাক্তন বুয়েটিয়ান, অ্যাপল কোম্পানির নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, সুইজারল্যান্ডের জুরিখ হতে পিএইচডিকৃত এবং কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের সাবেক ছাত্র হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনুসন্ধানে জানা যায়, কথিত ফাহিম (আল আমিন) বিগত কয়েক বছর ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় ৫০ জন তরুণীর সঙ্গে তার ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। র্যাব খবর নিয়ে জানতে পারে, ফাহিম এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার বাবা এক সময় কৃষিকাজ করতেন, বর্তমানে অবসর জীবনযাপন করছেন। তার অন্য দুই ভাইয়ের একজন কৃষক ও অপরজন স্থানীয়ভাবে গঞ্জের হাটে ওষুধের দোকান করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, কারও সম্পর্কে ভালো করে না জেনে কোনো ধরনের সম্পর্কে না জড়ানো ভালো। ফাহিমের মতো প্রতারক সারা বাংলাদেশেই সক্রিয়। যারা নানা পরিচয়ে নিজেদের উপস্থাপন করে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে বড় ধরনের ক্ষতি করে কেটে পড়ে।