বিষযুক্ত ভেজাল খাদ্যে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

উৎপাদন থেকে তা খাওয়া পর্যন্ত ফলমূলসহ সকল খাদ্য বিষমুক্ত ও নিরাপদ রাখার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন-পবা।

সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিষমুক্ত নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি দেশে বহুল আলোচিত এবং উদ্বেগের। ভোক্তা সাধারণ কোনো খাবারেই নিশ্চিন্ত খেতে পারছেন না। ব্যাপক পরিসরে এই খাদ্য ভীতি মানুষকে গ্রাস করেছে।

গতকাল শুক্রবার শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা এ দাবি জানান। মানববন্ধনের আয়োজন করে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ও পল্লীমা গ্রীণসহ ৮টি সংগঠন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আসছে রমজানে ইফতারিতে যে সমস্ত খাদ্যপণ্য বেশি ব্যবহূত হয় সেগুলোর উত্পাদন, আমদানি, মজুতকরণ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে চলছে। অসাধু শিল্পপতি, উত্পাদনকারী, কৃষক, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, মজুতদার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা অধিক মুনাফার লোভে এসব খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক ও ভেজালের মিশ্রণ করে থাকে। যা মানুষকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং আগামী প্রজন্ম বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বড় হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় উত্পাদন পর্যায় থেকে বাজারজাতসহ খাদ্য গ্রহণ পর্যন্ত খাদ্যকে নিরাপদ রাখতে জোর কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলেন।

পল্লীমা গ্রীণ-এর চেয়ারম্যান মুহাম্মদ লুতফর রহমান বলেন, উত্পাদন প্রক্রিয়ায় সার কীটনাশক যথেষ্ট ব্যবহার করা হচ্ছে। অননুমোদিত এবং মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশাকও ব্যবহার করা হচ্ছে। আনারস কলাসহ বিভিন্ন খাদ্যে গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করা হচ্ছে। কিছু খাদ্যে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহারও করা হচ্ছে। ফলমুল পাকানোর জন্য রাসায়নিক ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার স্বল্প দূরত্বের আর প্রচুর চাহিদা থাকায় এখানে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় খাদ্য পাকানোর কোনো দরকার নেই।

নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ)-এর সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষিতে কীটনাশক পরিমাণমতো ব্যবহারের অনুমোদন দিলেও মাঠে কী হচ্ছে, তা যথাযথভাবে নজরদারি করা হচ্ছে না। কীটনাশক ব্যবহারের একটি নির্দিষ্ট সময় পর শস্য বা ফল বাজারে নেওয়ার কথা থাকলেও সে পর্যন্ত অপেক্ষা করা হচ্ছে না। উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা থাকলেও তারা মাঠে গিয়ে কৃষককে সচেতন করে তোলার কাজ করছে না।

বক্তারা আরো বলেন, অত্যধিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কৃষক ও জনগণ গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যের কারণে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে, গর্ভবতী নারীরা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মদান ও গর্ভস্থ শিশু প্রতিবন্ধী হওয়ার আশঙ্কাও থাকছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব খাবার খাওয়ার ফলে বয়স্ক ও শিশুদের মধ্যে ক্যান্সার জাতীয় রোগের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিরাপদ পানি আন্দোলন (বানিপা)-এর সাধারণ সম্পাদক এমএ ওয়াহেদ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ-এর সভাপতি আমির হাসান মাসুদ, পল্লীমা সংসদের সাধারণ সম্পাদক আউয়াল কামরুজ্জামান ফরিদ, আইনের পাঠশালার সভাপতি সুব্রত দাস, পল্লীমা গ্রীণের সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান খান রবিন প্রমুখ।

Others জাতীয় শীর্ষ সংবাদ