নিজস্ব প্রতিবেদক
ইতিহাস গড়ে দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর ১২টায় (গ্রিনিচ মান সময় ১৭.০০ বা বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ক্যাপিটল রোটুন্ডায় এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ট্রাম্পকে ৩৫ শব্দের শপথবাক্য পাঠ করান। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের প্রথম ধারায় নেওয়া শপথে ট্রাম্প বাইবেল ছুঁয়ে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে শপথ করছি, বিশ্বস্ততার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের দায়িত্ব সম্পাদন করব এবং আমার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষা, সংরক্ষণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করব।’ সূত্র : এএফপি, সিএনএন, স্কাই নিউজ, আলজাজিরা, রয়টার্স
শপথ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন যাত্রা হলো। যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে প্রথম হিসেবে বিবেচনা করেই চলবে আমার কার্যক্রম। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তায় যা কিছু করা দরকার তার সবই করা হবে। এর মধ্য দিয়ে আমরা এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করব। আমার প্রশাসন হবে আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী ও কার্যকর।’ ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অভিবাসন নীতি, অর্থনৈতিক বিভাজন, সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন, ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কথা বলেন। এ শপথ গ্রহণের কয়েক মিনিট আগে তিনি অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন। ট্রাম্পের আগে শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স। অনুষ্ঠানে বিদায়ি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প অনুষ্ঠানস্থলে আসার আগে সেখানে উপস্থিত হন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, সাবেক ফার্স্ট লেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। উপস্থিত ছিলেন ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প, ছোট ছেলে ব্যারন ট্রাম্প, টিফানি ট্রাম্প, লারা ট্রাম্প, এরিক ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার, ইভাঙ্কা ট্রাম্প এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। বিদেশি অতিথি হিসেবে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইসহ আরও অনেকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে স্পেসএক্স ও টেসলার সিইও ইলন মাস্ক, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, মেটার সিইও মার্ক জুকারবার্গ, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ শপথের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ট্রাম্প ২.০ যুগের’ সূচনা হলো। বিশ্ব ক্ষমতার মঞ্চে আবারও প্রবেশ করলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ড. ইউনূসের শুভেচ্ছা : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতে তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়বিশ্বাস ব্যক্ত করেছিলেন যে, দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের জন্য দুই দেশ কাজ করবে। আমরা সেই বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করছি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মেয়াদের শুরুতে তাঁকে শুভ কামনা জানাই।
২০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে এ শপথ অনুষ্ঠানের নিরাপত্তায় রাজধানীতে দায়িত্ব পালন করে ন্যাশনাল গার্ডের ৭ হাজার ৮০০ সদস্যসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ২৫ হাজার সদস্য। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শপথের সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।
উল্লেখ্য, ভয়াবহ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক এ অভিষেক ১৯৮৫ সালের পর এবারই প্রথম ক্যাপিটল হিলের বাইরে না হয়ে অনুষ্ঠানটি হলো ইনডোরে। তবে তীব্র ঠান্ডার মধ্যেও শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে লাখো মানুষের সমাগম ঘটে। অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিভিন্ন দেশের নেতা ও প্রতিনিধি। ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানটি সরাসরি উপভোগ এবং প্রেসিডেন্সিয়াল প্যারেড আয়োজন করতে ক্যাপিটাল ওয়ান এরিনা (ইনডোর ভ্যানু) খুলে দেওয়া হয়। শপথ গ্রহণের পর ট্রাম্প ক্যাপিটাল ওয়ানে সবার সঙ্গে যোগ দেন। এ অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ক্যারি আন্ডারউড এবং লি গ্রিনউডের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা। এ ছাড়া ‘ওয়াই এম সি এ’ গানে পারফর্ম করেন ভিলেজ পিপল। গান গেয়েছেন কিড রক এবং বিলি রে সাইরাসও।
আশাবাদী যুবসমাজ : আমাদের যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আশাবাদী যুবসমাজ। আর সবচেয়ে বেশি হতাশা প্রকাশ করেছেন ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সিরা। সিবিএস এবং ইউগভ পরিচালিত জরিপে এমন মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে। গতকাল ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে প্রকাশিত এ জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি যুবসমাজের ৬৭% বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্সিকে তারা স্বাগত জানাচ্ছেন এবং খুবই উৎসাহবোধ করছেন সামনের চারটি বছর নিয়ে। আর সব বয়সি আমেরিকানের ৬০%-এর মধ্যে ট্রাম্প প্রেসিডেন্সি নিয়ে এমন উচ্ছ্বাসের প্রকাশ ঘটেছে। তবে সিনিয়র সিটিজেন তথা ৬৫ বছরের অধিক বয়সির সিংহভাগেরই হতাশা প্রকাশিত হয় বলে জরিপ পরিচালনাকারীরা উল্লেখ করেছেন।