অনলাইন ডেস্ক
মধ্য বৈশাখের গরমে দেশে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মে স্বস্তি পেতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। তবে চাহিদা মতো বিদ্যুৎ না পেয়ে দিনের একটি অংশে কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার মানুষকে। ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত শনিবার সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৫ হাজার ৭৮৪ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১৫ হাজার ৬৪৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ এ দিন সাবস্টেশন পর্যায়ে লোডশেডিং হয় ১৩৯ মেগাওয়াট। অবচয় ক্ষতি ও সিস্টেম লসের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে লোডশেডের পরিমাণ আরও বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এবারের লোডশেড গত বছরের লোডশেডিংয়ের মতো তীব্র নয়। গত বছরের এপ্রিলেও বেশ কয়েক দিন লোডশেডিংয়ের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট ছুঁয়ে যায়।
এদিকে গরম যত বাড়ছে লোডশেডিং বৃদ্ধির আশঙ্কাও তত বাড়ছে। গত শনিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ না পেয়ে ঢাকায় প্রায় এক ঘণ্টা মেট্রোরেল বন্ধ ছিল। গ্যাস উৎপাদনে ও আমদানিতে অপ্রতুলতার কারণে শিল্পে গ্যাস সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়িয়েছে পিডিবি। তার পরও পর্যাপ্ত উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত বছরের ৩০ এপ্রিলে- ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের চাহিদা ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে প্রাক্কলন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে অর্থ ও জ্বালানি সংকটে এ পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন কঠিন। ফলে আগামী দিনগুলোতে লোডশেডিং বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গতকাল রবিবার সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানির চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে বিগত সময়ের ভুল নীতি ও পরিকল্পনার কারণে। অর্থ সংকটে তৈরি হয়েছে জ্বালানি সংকট। সেটি থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি। অন্তর্বর্তী সরকার অপচয় কমিয়েছে এবং খরচ নিয়ন্ত্রণ করছে। বিদেশি কোম্পানিগুলোর বকেয়া অনেকটা পরিশোধ করেছে। সামনে পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হবে বলে আশা করি। এখন ভর্তুকি দিয়ে খরচ বাড়িয়ে উৎপাদন বাড়াতে গেলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে তা সামাল দেওয়া কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাই লোডশেডিং একবারে বন্ধ এখন হবে না।
তিনি বলেন, বর্তমানে সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। গরমের কারণে সামনে ১৮ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত চাহিদা বাড়বে। তখন তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন আরও বাড়ানো হবে। লোডশেডিং সহনীয় রাখার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে শহর ও গ্রামে সমানভাবে লোডশেডিং করা হবে।
সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র অলস পড়ে থাকছে
দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে মোট ৭১টি। এ ধরনের কেন্দ্রের বর্তমান স্থাপিত সক্ষমতা ১২ হাজার ৩৩৩ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে হলে দৈনিক ২ হাজার ৪২০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। কিন্তু জ্বালানি সংকটের কারণে সব বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর সুযোগ নেই। আবার পিডিবির দৈনিক জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে গ্যাসের প্রয়োজন অন্তত ১ হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু পেট্রোবাংলা থেকে বিদ্যুতে গ্যাসের বরাদ্দ রয়েছে গড়ে সাড়ে ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। তা দিয়েই গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলোকে রেশনিং করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হচ্ছে পিডিবিকে। এতে কোনো না কোনো গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে মোট সক্ষমতার অর্ধেকের বেশি কেন্দ্র অলস পড়ে থাকছে। এ ছাড়া গরমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন দেড় লাখ টন ফার্নেস অয়েল ও ১৫-১৬ হাজার টন ডিজেল। দৈনিক কয়লার চাহিদা ৪০ হাজার টন। আমদানিকৃত বিদ্যুত্সহ দেশে স্থাপিত বিদ্যুতের ক্ষমতা সবমিলিয়ে ২৬ হাজার ৯০০ মেগাওয়াট