দিনাজপুরে গাছ থেকে অঝোরে ঝরছে পানি!

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনের ভেতর সন্ধান মিলেছে এক অদ্ভুত প্রকৃতির গাছের। গাছটির নিচ দিয়ে কেউ গেলেই অনুভব করবে এই বুঝি বৃষ্টি শুরু হবে! গাছটি নিয়ে পুরো এলাকায় শুরু হয়েছে গুঞ্জন ও চাঞ্চল্য।

বিরল উপজেলার কালিয়াগঞ্জ বাজার থেকে কয়েক কিলোমিটার দক্ষিণে ভারতের সীমান্তবর্তী গোবরার বিল এলাকায় গভীর বনে দেখা মিলেছে এই অদ্ভুদ গাছটির। এটির নিচ গেলেই ঝিরঝির বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করা যায়।

স্থানীয় আদিবাসী গোদাবাড়ী এলাকার রমজান পাহান(৩৬) জানান, জঙ্গলে গাছটি দেখেছি। ধর্মপুর শালবনের ধুলাপাথারের গাছটির নিচে গেলেই পানি পড়ে। বৃষ্টির মতো ফোঁটায় ফোঁটায় পানি গাছের পুরো স্থানজুড়ে ঝরছে।

আরেক আদিবাসী ধর্মজল এলাকার সুখি টুডু (৫০) জানান, গাছটিকে আমরা ‘শেখরেদারে’ বলে ডাকি। গাছটি থেকে পানি পড়ে তা দেখেছি। এটা অবাক করার মত বলেও জানান সুখি টুডু।

গাছটির বেড় প্রায় ৪ ফুট এবং লম্বা ১২ ফুটের মতো। অনেকটা ডাল পালা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। পাতাগুলো দেখতে গোলাকার।

অদ্ভুত এই গাছটির খবর পেয়ে সরজমিনে পরিদর্শন করতে যাওয়া দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের এমএসসির শিক্ষার্থী মোসাদ্দেক হোসেন জানান, গাছটির কচি কাণ্ড এবং পুরাতন কাণ্ডের সংযোগে বাকল ফেটে নতুন কুঁড়ি বের হওয়ার স্থান থেকে পানি ঝরছে। বিষয়টি আশ্চর্যের! উদ্ভিদ থেকে পানি এভাবে ঝরার বিষয়টি নতুন বলেই মনে হয়েছে।

মোসাদ্দেক হোসেন আরও জানান, গাছের নতুন কাণ্ডে পানি জমে ফেনার সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে। ওই বনে আরও বেশ কিছু একই প্রজাতির গাছ রয়েছে এবং প্রতিটি থেকেই পানি ঝরছে।

সরজমিনে গাছটি পর্যবেক্ষণে আসেন উদ্ভিদ বিষয়ক গবেষক, লেখক ও দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।

দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্ষাকালে অনেক গাছেই অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। এই গাছটিও বেশি পরিমাণে পানি শোষণ করে। নতুন কাণ্ড বা নতুন কুঁড়ি বের হওয়ার স্থানে পুরাতন কাণ্ড ভেদ করে বের হওয়ার ফলে উদ্ভিদটির ভাস্কুলার বান্ডেল তথা পরিবহন কলাগুলো বেরিয়ে পড়েছে। ফলে উদ্ভিদের মূল থেকে আরোহিত পানি কাণ্ডের ওই অংশ থেকে বিন্দু বিন্দু আকারে ঝরে পড়ছে।

তিনি বলেন, অতিরিক্ত পানির চাপ থাকায় ভাস্কুলার বান্ডেল তথা পরিবহন কলা কাণ্ডের ছিদ্র দিয়ে পানি বাইরে সজোরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভ্যাপার বা বাষ্পায়ন না ঘটার ফলে গাছের নিচে কেউ গেলে বৃষ্টির মতো পানি ঝরা অনুভব করছে।

দিনাজপুর সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষক আরও জানান, গাছটির পাতা ডালসহ প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলা যাবে যে এটি কোন ধরনের উদ্ভিদ।

তবে প্রাথমিকভাবে তিনি জানান, উদ্ভিদটি Liguminaceae গোত্রের হতে পারে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ