সহায়ক জামানত হিসেবে জমি বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বন্ধকি এ সম্পদ বিক্রি করে সেটি আদায়ের কথা।
সহায়ক জামানত হিসেবে জমি বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে প্রায় ১১ লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে দেশের ব্যাংকগুলো। গ্রাহক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে বন্ধকি এ সম্পদ বিক্রি করে সেটি আদায়ের কথা। কিন্তু ব্যাংকের কাছে জামানত হিসেবে থাকা এসব সম্পদের বেশির ভাগই এখন আর বিক্রি করা যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রভাবশালী ও বড় ঋণখেলাপিদের সম্পদ কেনায় কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে ক্রেতা খুঁজে পেলেও নিবন্ধন করতে চাচ্ছেন মৌজা দরে। এতে সম্পত্তির বাজার মূল্যের সঙ্গে মৌজা দরের বিস্তর ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রদর্শিত বা সাদা টাকা না হওয়ায় সম্পত্তি বিক্রির অর্থে ব্যাংক ঋণও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সম্প্রতি সম্পত্তি বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ নেয় দেশের বৃহৎ একটি শিল্প গ্রুপ। ওই গ্রুপটির দ্বিতীয় প্রজন্ম চাচ্ছে, জমি বিক্রি করে হলেও ব্যাংক ঋণের ভারমুক্ত হতে। রাজধানীসহ ঢাকার আশপাশে নিজেদের মালিকানায় থাকা ভবন ও জমি ৪০০ কোটি টাকায় বিক্রির জন্য ক্রেতাও খুঁজে পেয়েছেন তারা। কিন্তু গোল বেঁধেছে সম্পত্তি মূল্যের প্রদর্শিত অর্থ নিয়ে। ক্রেতা চাচ্ছেন, মৌজা দরে সম্পদের ক্রয় মূল্য ১০০ কোটি টাকা দেখাতে। এ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে পরিশোধ করা হবে। বাকি ৩০০ কোটি টাকা দেয়া হবে নগদে।
খাদ্য, পানীয়, দুগ্ধ ও নির্মাণ খাতের অন্যতম বৃহৎ ওই গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বণিক বার্তাকে জানান, ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে চাচ্ছি। বহু চেষ্টার পর বাজার দরের চেয়েও কম মূল্যে একজন ক্রেতা খুঁজে পেয়েছি। কিন্তু ক্রেতা সম্পত্তি মূল্যের মাত্র এক-চতুর্থাংশ প্রদর্শিত অর্থ হিসেবে দিতে চাচ্ছেন। বাকি অর্থ পরিশোধ করতে চাচ্ছেন নগদে। অপ্রদর্শিত এ অর্থ দিয়ে আমি কীভাবে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করব। আমার মতো দেশের অনেক ব্যবসায়ী একই ধরনের সংকটে পড়েছেন। আবার ব্যাংকগুলোও সম্পত্তি বিক্রি করে ঋণ আদায় নিয়ে বিপদে আছে। খেলাপি ঋণ কমানোর পাশাপাশি অর্থনীতির স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া দরকার।
এ উদ্যোক্তার বক্তব্যের সত্যতা মিলছে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান, শীর্ষ নির্বাহীসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে। দেশের অর্ধ ডজন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও শীর্ষ নির্বাহী বণিক বার্তাকে বলেছেন, বিতরণকৃত ঋণ নিরাপদ করতে সহায়ক জামানত হিসেবে তারা জমি কিংবা বাড়ি বন্ধক রেখেছেন। কিন্তু প্রভাবশালী ব্যক্তি কিংবা শীর্ষ ঋণখেলাপিদের জামানত বিক্রি করে ব্যাংকের টাকা আদায় সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে এমন একজন ক্রেতাও নেই যে বৈধ অর্থে ৫০০ কিংবা ১০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি কিনবেন। যদিও ব্যাংকগুলো এখন হাজার হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায়ে এস আলম কিংবা সালমান এফ রহমানের মতো প্রভাবশালীদের সম্পত্তি নিলামে তুলছে। গণ-অভ্যুত্থান-পূর্ববর্তী সময়ে প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের সম্পদ নিলামে তোলার মতো সাহস কোনো ব্যাংক দেখাতে পারেনি। এখন ব্যাংকগুলো প্রভাবশালীদের বন্ধকি সম্পত্তি নিলামে তুললেও ক্রেতা খুঁজে পাওয়া যচ্ছে না। কারণ এত দামি সম্পত্তি কেনার মতো কেউ এখন আর দেশে নেই। কেউ কেউ থাকলেও প্রদর্শিত অর্থ (বৈধ অর্থ) না থাকায় তারা বন্ধকি সম্পত্তি কিনতে আগ্রহী নন।বিস্তারিত