অনলাইন ডেস্ক
বিদেশি বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎকারী একটি আন্তর্জাতিক প্রতারক চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১)। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুই নাইজেরিয়ান নাগরিক ও তাদের সহযোগী একজন বাংলাদেশি নারী রয়েছে।
গত রবিবার রাত থেকে গতকাল সোমবার দিনব্যাপী রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা এবং মিরপুরের পল্লবীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত দুই নাইজেরিয়ান নাগরিক হলেন- ফ্র্যাঙ্ক কোকো (৩৬), এম্যানুয়েল (৩৫) এবং বাংলাদেশি নারী সদস্য মোসা. সুইটি আক্তার (২৭)। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি ল্যাপটপ, চারটি আইফোন, তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন, তিনটি বাটন মোবাইল ফোন, একটি ট্যাব, একটি ওরিকো ব্র্যান্ডের হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়।
সোমবার রাতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ জাহিদুল করিম বলেন, ‘গ্রেপ্তাররা দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণার সাথে জড়িত বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতিকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ছোট-বড় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটি চক্র বিভিন্ন দফায় অর্থ আত্মসাৎ করছিল। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করেও চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে এসছিল। বিশ্বাস অর্জনের পরই চক্রটি ভুক্তভোগীদের লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়। এধরণের প্রতারণা বর্তমানে ব্যাপক হারে বেড়েছে এবং চক্রটি তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে যথেষ্ট দক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘প্রতারণার ক্ষেত্রে তারা বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ অথবা টেলিগ্রাম ব্যবহার করে অথবা ভুয়া অনলাইন ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর সংযুক্ত করতো।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন বিদেশী সোশ্যাল মিডিয়া নম্বর অনুসন্ধান করে নিশ্চিত হয়েছি যে, এ চক্রে কিছু নাইজেরিয়ান নাগরিক জড়িত যারা বাংলাদেশী মেয়েদের মিডিয়া হিসেবে ব্যবহার করে আড়ালে থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্ট নম্বরে সরাসরি ক্যাশ ইন/ক্যাশ আউট করে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে। তাদের নিয়োজিত নারীদের মাধ্যমে বিশ্বাস অর্জন করার সঙ্গে সঙ্গেই হাতিয়ে নেয় লক্ষাধিক টাকা।’
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বিশ্বাস অর্জনের ক্ষেত্রে তারা মূলত একজন বিত্তবান বিদেশি নাগরিকের বেশ ধরে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ, বিমানবন্দরের কার্গো সেকশনে ডলারের প্যাকেজ পাঠানো অথবা কাস্টম ক্লিয়ারেন্সে বিদেশ থেকে পাঠানো দামী পণ্য নিষ্পত্তি করার জন্য নির্ধারিত চার্জ দাবি করে প্রতারণা করে। এক্ষেত্রে তারা ফটোশপ করা বিভিন্ন ধরনের ছাড়পত্র ও সার্টিফিকেট বানিয়ে গ্রাহকদের বিশ্বাস অর্জন করে প্রথম ধাপে সামান্য অর্থ হাতিয়ে নেয়। পরে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স অথবা বিভিন্ন ডকুমেন্টেশনের জন্য বড় অংকের টাকা দাবি করা হয় যা অধিকাংশ গ্রাহক প্রলুব্ধ হয়ে টাকা দেয়।’
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার নাইজেরিয়ান নাগরিক কোকো ও এম্যানুওয়েল প্রায় দুই বছর এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তাদের সহযোগী সুইটি আক্তার তিন মাস ধরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। কোকো দুই বছর আগে র্যাব-১০ এর হাতে গ্রেপ্তার হয়। চলমান অভিযানে তাদের থেকে দুটি নগদ ও বিকাশ একাউন্ট এ প্রায় ১৮ লাখ টাকার স্টেটমেন্ট পাওয়া যায়, যেখানে এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে পাঠানো মেসেজের বরাতে টাকা জমা হচ্ছে।
র্যাব আরও জানায়, তারা এর পাশাপাশি আরও মোবাইল ব্যাংকিং সিম এবং একাউন্ট ব্যাবহার করে যা উদ্ধার করার প্রক্রিয়া চলমান। গ্রেপ্তার নারী সদস্য মূলত বাংলাদেশের লোকাল কোর্ডিনেটর/মিডিয়ার বেশ ধরে বিভিন্ন বাংলাদেশিদের নম্বরে যোগাযোগ করে এবং তাদের প্রলুব্ধ করে অর্থ আত্মসাৎ করে। এক্ষেত্রে তার পাশাপাশি অন্যান্য কিছু বাঙালিরাও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মিডিয়া হিসেবে অংশগ্রহণকারিরা প্রতারণায় প্রাপ্ত ১০-১৫ শতাংশ টাকার শেয়ার পায়।