আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলন মাস্কের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনাকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিলেও বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, এই উদ্যোগ রিপাবলিকানদের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন কংগ্রেসে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা খুবই সীমিত।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
গত সপ্তাহে ইলন মাস্ক ‘আমেরিকা পার্টি’ চালু করেছেন, যা ট্রাম্পের একটি বিশাল ঘরোয়া নীতিমালার বিল সই করার পরের পর্যায়ে এলো। মাস্ক ওই বিলের সমালোচনা করে বলেছেন, এতে বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে।
টেসলার প্রতিষ্ঠাতা মাস্ক বিস্তারিত নীতিমালা না দিলেও ধারণা করা হচ্ছে, তিনি আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসের কিছু আসন লক্ষ্য করবেন, যেখানে সংশ্লিষ্ট রিপাবলিকানরা বাজেট দায়িত্বের কথা বলার পরও ট্রাম্পের বিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাবেক রিপাবলিকান প্রার্থী ম্যাট শুমেকার বলেন, ‘ইলন মাস্কের ‘আমেরিকা পার্টি’ ২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। কংগ্রেসে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেহেতু অল্প, তাই তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’
মাস্কের বিপুল সম্পদ এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা তাকে অন্য তৃতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে আলাদা করেছে। জুনে মাস্কের করা এক অনলাইন জরিপে ৫৬ লাখের বেশি অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৮০ শতাংশ তার নতুন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন জানিয়েছেন।
শুমেকার এএফপিকে বলেন, ‘মাস্কের ব্র্যান্ড এমন তরুণ ভোটার এবং প্রযুক্তি-সচেতন স্বাধীন ভোটারদের কাছে আকর্ষণীয়, যারা সাধারণত রিপাবলিকানদের দিকে ঝুঁকতেন।’
জনপ্রিয়তায় ট্রাম্পের চেয়ে পিছিয়ে
৪০৫ বিলিয়ন ডলারের সম্পদের মালিক মাস্ক রাজনীতিতে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী। ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রচারণায় তিনি ২৭৭ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন। তবে উইসকনসিনে একটি স্থানীয় নির্বাচনে ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেও তার সমর্থিত প্রার্থী হেরে যাওয়ায় দেখা গেছে, অর্থ ও খ্যাতিরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
নেইট সিলভার পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে মাস্কের নেট ফেভারেবিলিটি মাইনাস ১৮.১, যেখানে ট্রাম্পের মাইনাস ৬.৬।
ওয়াশিংটন কলেজের রাজনৈতিক বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফ্লাভিও হিকেল বলেন, ‘আজকের রাজনৈতিক বাস্তবতায় রিপাবলিকান ঘাঁটি এবং MAGA আন্দোলন একেবারে অভিন্ন হয়ে গেছে। মাস্কের কোনো রাজনৈতিক প্রকল্প ট্রাম্পের পক্ষে থাকা ভোটারদের কাছ থেকে ভোট কেড়ে নেবে, তা কল্পনা করা কঠিন।’
তৃতীয় দলের ইতিহাস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় দলের প্রার্থীরা খুব কমই নির্বাচনে জিততে পেরেছেন। গত শতকে নিউইয়র্কের কনজারভেটিভ পার্টি এবং ফার্মার-লেবার পার্টি একমাত্র দুটি ছোট দল যারা সিনেট আসন জিততে পেরেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তৃতীয় দল হিসেবে আসন জেতা কঠিন হলেও মাস্ক রিপাবলিকানদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারেন, কারণ তিনি রিপাবলিকানদের ভোট কেটে নিতে পারেন বা ট্রাম্পের পছন্দের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রাথমিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সহায়তা করতে পারেন।
গ্লোবাল ক্রাইসিস পিআর ফার্ম রেড বানিয়ানের প্রধান ইভান নায়ারম্যান বলেন, ‘মাস্কের দল আসন জিততে নাও পারে, কিন্তু রিপাবলিকানদের জন্য এটা ব্যয়বহুল হতে পারে। কঠিন আসনগুলোতে কয়েকটি ভোট কেটে নিলেই নিয়ন্ত্রণ হারানোর শঙ্কা তৈরি হবে।’