সমৃদ্ধ মালয়েশিয়া গড়ার কারিগরদের শ্রমের স্বীকৃতি দিলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা ডা. মাহাথির মোহাম্মদ দেশের উন্নতির জন্য সমগ্র স্থানীয় ও বিদেশি কর্মীদের একইভাবে প্রশংসা করেছেন।
তিনি বলেছেন, এই উন্নতির ফল উপভোগ করার সময়, আমাদের মনে রাখা উচিত যে আমাদের আরাম বিদেশিদের কষ্ট ও ঘামের কারণেই হয়েছে। বিদেশি কর্মীরা এমন লোক, যারা কষ্ট করে এবং ঘাম ঝরিয়ে আমাদের প্রয়োজন বা চাহিদা মেটাচ্ছে, যার মধ্যে আমাদের খাবার রয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধান নেটওয়ার্ক ও মিডিয়া চ্যানেলে ঈদ উপলক্ষে দেশবাসীকে জানানো অভিবাদন বক্তৃতায় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিদেশি কর্মী ছাড়া আমাদের দেশ একটি দরিদ্র জাতি হিসেবে থাকবে।
তবে মাহাথির সরকার গঠন করার পর থেকে বিগত এক বছর বিদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত আছে। কল কারখানায় উৎপাদন কমে গেছে। অবৈধ অভিবাসী কর্মী মালয়েশিয়ায় বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তাছাড়া কর্মী ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিচে থাকা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকার অভিযোগ ঝুলে আছে মালয়েশিয়ার ওপর। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়, দালালের দৌরাত্ম্য এবং শ্রমিকদের আয়ে এজেন্টের ভাগ বসানো ইত্যাদি অভিযোগ আমলে নিয়ে মাহাথির সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ইতিমধ্যে বিদেশি কর্মী বাছাই, নিয়োগ ও প্রত্যাবর্তন সম্পর্কিত স্বাধীন কমিটির রিপোর্ট সরকার গ্রহণ করেছে। এর আলোকে কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। সকলে আশা করছে নিয়ম কানুনের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী আসবে।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়ায় ভারত, নেপাল, ফিলিপাইন, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, আফগানিস্তান, শ্রীলংকা এবং বাংলাদেশসহ ১৫টি উৎস দেশ থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার কর্মী। এরপর নেপাল তারপর বাংলাদেশের কর্মী রয়েছেন।
এদের মধ্যে দক্ষ, পরিশ্রমী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশের সারথিরা। কুয়ালালামপুরের টুইন টাওয়ার, এম আরটি, তুনরাজ্জাক এক্সচেঞ্জ, কেএল টাওয়ার, সানওয়ে পিরামিড, সাইবার জায়া, পোর্টক্লাং, পেনাংয়ের বাতুফিরিঙ্গি সৈকত, তেরেঙ্গানুর মসজিদ, মেলাকার মালয় রেস্তোরাঁ, পাহাঙ্গের চা বাগান, পেরাকের রাবার বাগান, লংকাউই দ্বীপ, পাম অয়েল সর্বত্র রয়েছে বাংলাদেশির শ্রম ও ঘাম।
যে উন্নয়নের রূপরেখা করে বাস্তবায়নের জন্য আত্মনিয়োগ করেন মাহাথির মোহাম্মদ তার প্রধান কর্মী ছিলেন বাংলাদেশের কর্মীরা। আজ সে রূপরেখা উন্নয়নের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। সে মুহূর্তে বিদেশি কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন করে দেশবাসীকে তাদের জন্য কৃতজ্ঞ ও সদয় হতে অনুরোধ করলেন।
বিদেশি কর্মীরা আপনজন ছেড়ে পরবাসে এসে কাজ করছে তারা শুধু মালয়েশিয়ার নয় নিজ পরিবারের সচ্ছলতা আনাসহ দেশের উন্নতি করছে। বাংলাদেশ তার সফল উদাহরণ।
এতো কিছুর পর কিছু হয়রানি, অযৌক্তিক শাস্তি এবং অসাধু চক্রের খপ্পরে কর্মীদের সর্বস্বান্ত হওয়ার অনেক নজির রয়েছে। মাহাথির সরকার সেদিকে কড়া নজর দিবে বলে বিশ্বাস করে।
নাজীব সরকার অবৈধ কর্মীদের বৈধতার সুযোগ দিলে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কর্মী আইনের আওতায় কাজ করার জন্য সরকার নির্ধারিত তিন ভেন্ডরের (মাইই ইজি, ঈমান, বুক্তি মেঘার) মাধ্যমে নাম রেজিস্ট্রেশন করেও কিছু সংখ্যক কর্মী প্রতারিত হয়েছে।
হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতারিতদের বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকার গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। প্রবাসীরা আশা করছেন দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের যন্ত্রণার ও কষ্টের লাঘব হবে। পাশাপাশি প্রতারকদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন প্রবাসীরা।
এ ছাড়া বৈধ বা অবৈধ যেভাবেই মালয়েশিয়ায় অবস্থান করুক না কেন তারা মালয়েশিয়ায় উন্ময়নের জন্য কাজ করেছে। তাই অবৈধ কর্মীরা সহজ শর্তে নির্বিঘ্নে দেশে ফেরত যাওয়ার আশায় রয়েছেন।
মাহাথির মোহাম্মদের কথার মতো বাংলাদেশ সরকার শ্রম অভিবাসন আইনের মধ্যে রেখে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও কল্যাণ নিশ্চিত করবে এমন প্রত্যাশা করে অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে এমন এনজিও। কর্মী প্রেরণে আর যেন সিন্ডিকেটের জন্ম না হয়, দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীর অত্যাচার না চলে, ব্যয় যেন সর্বনিম্ন হয়।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ বিদেশি কর্মীদের এমন মূল্যায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। তিনি প্রবাসীদের এ সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য অনুরোধ করেছেন।
প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, প্রবাসীদের কল্যাণে কোনো আপস করা হবে না এবং সব কিছু জেনেশুনে বুঝে বিদেশে যাবেন।