রাজবাড়ীতে স্কুলছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ

রাজবাড়ী প্রতিনিধি’ এবার রাজবাড়ীতে অশ্লীল ছবি তুলে ব্লাকমেইলের পর দাবি করা টাকা না পেয়ে এক স্কুলছাত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার পাঁচুরিয়া ইউনিয়নের খোলাবাড়িয়া গ্রামে।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ফজলুর রহমান বাদী হয়ে শিল্পী বেগম নামে এক নারীসহ অজ্ঞাত আরও চারজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় মামলা করেছেন। শিল্পী বেগম একই গ্রামের জাহাঙ্গীর মিজির স্ত্রী। পুলিশ মামলার আলামত হিসেবে ওই স্কুলছাত্রীর পুড়ে যাওয়া কামিজ ও সালোয়ার জব্দ করেছে। যুলি নামের ওই মেয়েটি স্থানীয় খানখানাপুর তমিজ উদ্দিন খান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে।

মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, গত ১২ এপ্রিল স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার সময় অজ্ঞাত কয়েকজন তার মেয়েকে জোরপূর্বক রাস্তার পাশে জঙ্গলে নিয়ে ছুরি দিয়ে ভয় দেখিয়ে অশ্লীল ছবি তোলে। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে অভিযুক্ত শিল্পী বেগম তার মেয়ের কাছে দুই লাখ টাকা দাবি করে। ঈদের দিন বাড়ির পাশে পুকুর থেকে গোসল করে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত এক লোক পেছন থেকে তার মেয়ের মাথায় আঘাত করে। পরে স্থানীয়ভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর গত ৬ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মেয়ে বাড়ির বারান্দায় বসে জাম খাওয়ার সময় অজ্ঞাত চার বোরকা পরা লোক তার মুখ চেপে ধরে তাকে বাড়ির পেছনে একটি পাট ক্ষেতে নিয়ে যায়। সেখানে তার মেয়ের ওড়না দিয়ে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ম্যাচের কাঠি দিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার মেয়ে মাটিতে গরাগরি করায় আগুন বাড়তে পারেনি। পরে মেয়ের গোঙানোর শব্দ শুনে তার স্ত্রী গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরে তাকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ফজলুর রহমান বলেন, শিল্পী বেগমের সঙ্গে তার কোনো শত্রুতা নেই। তাদের কাজ মানুষকে ব্লাকমেইল করা। আমার মেয়ের কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য একটা ফাঁদ পেতেছিল।

রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, মামলার এজাহারে চারটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশ প্রতিটি ঘটনাই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। পুলিশ স্কুলছাত্রীর পুড়ে যাওয়া কামিজ ও সালোয়ার জব্দ করেছে। আসামি শিল্পী বেগমকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

শনিবার রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার আসমা সিদ্দিকা মিলি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রেজাউল করিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে ঘটনার পর ওই ছাত্রীর ভাই সোহেল বেপারী এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বোনের পুড়ে যাওয়া সালোয়ার-কামিজের ছবি প্রকাশ করেন। পরে সেই স্ট্যাটাসটি ভাইরাল হয়ে যায়। সেই স্ট্যাটাসে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অভিযুক্তদের বিচার চান। পরে শনিবার দেওয়া আরেক তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া পুলিশের প্রশংসা করেন তিনি।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজীতে নুসরাত জাহান রাফি নামে এক মাদ্রসাছাত্রীর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। এ ঘটনায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ