রংপুর প্রতিনিধি
অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশের সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) মো. আরিফুজ্জামান। তিনি রংপুরের আবু সাঈদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলার অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কাকডাঙ্গা সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাকিমপুর সীমান্ত চৌকির কাছে গেলে বিএসএফ তাকে আটক করে। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।
জানা যায়, গ্রেপ্তারকৃত আরিফুজ্জামান গত বছরের ৫ আগস্টের আগে রংপুর মেট্রোপলিটনের সহকারী পুলিশ কমিশনার পদে কর্মরত ছিলেন। একইসঙ্গে তিনি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-২ (এপিবিএন) ময়মনসিংহে সংযুক্ত ছিলেন। গত ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনির সই করা এক প্রজ্ঞাপনে বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই ও মামলার বাদী রমজান আলী বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হওয়াতে আমরা অনেক খুশি। আমাদের দাবি অতিদ্রুত এই অপরাধীকে বাংলাদেশে এনে বিচার নিশ্চিত করা হোক।’
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তা আরিফুজ্জামানের নামে কয়েকটি মামলা রয়েছে। তার নামে ওয়ারেন্ট রয়েছে। তার গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে বাংলাদেশের ট্যারিটরির মধ্যে আনা হলে নিয়ম অনুযায়ী ওই মামলাগুলোয় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’
উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন বেরোবির ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ। এ ঘটনায় আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী বাদী হয়ে গত ১৮ আগস্ট সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, রংপুর রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবদুল বাতেন, রংপুর মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আল মারুফ হোসেন, সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, আল ইমরান হোসেন, তাজহাট থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির আলী, কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মশিউর রহমান ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, প্রক্টর অফিসের কর্মকর্তা রাফিউল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক শামীম মাহফুজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার রায়, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩০-৩৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
পরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ সাতজনের নাম মামলায় নথিভুক্ত করার জন্য সম্পূরক এজাহার দেন রমজান আলী। আদালতের আদেশে তাদেরও ওই মামলায় নামীয় এজহারভুক্ত আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।