সামিট কমিউনিকেশনের চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা ১০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগ

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারের ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ টাকার রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফরিদ খানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নাছরুল্লাহ হোসাইন বাদী হয়ে সংস্থাটির সমন্বিত জেলা কার্যালয়, ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।

মোহাম্মদ ফরিদ খান ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- লেক্স কাউন্সিলের স্বত্বাধিকারী ও বিটিআরসির প্যানেল আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, সাবেক কমিশনার (আইন) মো. আমিনুল হক বাবু, সাবেক কমিশনার (স্পেকট্রাম) শেখ রিয়াজ আহমেদ, সাবেক কমিশনার (অর্থ, হিসাব ও রাজস্ব) ড. মুশফিক মান্নান চৌধুরী ও সাবেক কমিশনার (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) মো. দেলোয়ার হোসাইন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, রাজস্ব সংক্রান্ত ওই অর্থ আদায় না করে আত্মসাতের উদ্দ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আসামিরা একে অপরের সহযোগিতায় অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে সামিট কমিউনিকেশনের শেয়ারের ইকুইটি বৃদ্ধি ও শেয়ারের মালিকানায় পরিবর্তনের চূড়ান্ত অনুমতি প্রদান করেন। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রন আইন-২০০১ এর ধারা ২৪ এ শেয়ার হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে হস্তান্তরিত বা বিক্রিত শেয়ার মূল্যের ৫.৫ শতাংশ মূল্য এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ মোট ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ টাকা পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা ছিল। সামিট কমিউনিকেশন সরকারি অর্থ আত্মসাতের মানসে এই টাকা পরিশোধ করেনি। ওই শেয়ার হস্তান্তর করা হয় গ্লোবাল এনার্জিস হোল্ডিংস লিমিটেডের অনুকূলে।

এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি-১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৫১১/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এজাহারে আরও বলা হয়, বিটিআরসির কর্মকর্তা ও লেক্স কাউন্সিলের প্যানেল আইনজীবীর সহযোগিতায় সামিট কমিউনিকেশনস বেআইনিভাবে ১৪ কোটি ২০ লাখ ৮৮ হাজার ১৩৬টি নতুন অর্ডিনারি শেয়ার ইস্যু করে। যার মধ্যে ৯ কোটি ৪৪ লাখ ৮৮ হাজার ৯১১টি শেয়ার দেওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক গ্লোবাল এনারিং-এ, যা মুহাম্মদ আজিজ খান ও তার পরিবারের মালিকানাধীন। ৪ কোটি ৪ লাখ ৯৫ হাজার ১১৯টি শেয়ার দেওয়া হয় মরিশাসভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেকুওয়া ইনফ্রা টেক লিমিটেডকে। বাকি ৭১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬টি শেয়ার দেওয়া হয় পূর্বের শেয়ারহোল্ডার মো. আরিফ আল ইসলামের অনুকূলে। এই শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানির মূলধন প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়ে মোট শেয়ার সংখ্যা ৫.০৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৯.২৮ কোটিতে পৌঁছে।

এতে মোহাম্মদ ফরিদ খানের মালিকানা ৯৫ শতাংশ থেকে নেমে ২৫ শতাংশে আসে। অন্যদিকে দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের যৌথ মালিকানা দাঁড়ায় ৭০ শতাংশ। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন-২০০১-এর ধারা ২৪ অনুযায়ী, শেয়ার হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, বিক্রিত শেয়ারের মূল্যের ৫.৫ শতাংশ রাজস্ব পরিশোধ করতে হয়। ২০২২ সালে একই কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সরকারি রাজস্ব আদায়ে ওই আইনের প্রয়োগ থাকলেও এক্ষেত্রে বিটিআরসির আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব সামিট কমিউনিকেশন থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উক্ত ৫.৫ শতাংশ মূল্য পরিশোধ সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের জন্য প্রযোজ্য নয় মর্মে মতামত দেন। এই মতামতের ভিত্তিতে বিটিআরসির তৎকালীন চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কমিশনাররা মিলে অবৈধ সুবিধা নিয়ে শেয়ারের অনুমোদন দেন, ফলে সরকার প্রায় ১০ কোটি ২৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ টাকা রাজস্ব হারায়

বাংলাদেশ শীর্ষ সংবাদ