রাজবাড়ী প্রতিনিধি
রাজবাড়ীতে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট ওপরে বিশেষ কায়দায় কবর দেওয়া নুরাল পাগলার মাজারে ভাঙচুরের পর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। সেই সঙ্গে নুরাল পাগলার মরদেহ কবর থেকে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় তৌহিদী জনতা নামধারী একদল মানুষ। এ সময় উত্তেজিত জনতা ও নুরাল পাগলার অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। মারা গেছে রাসেল মোল্লা (২৮) নামের এক যুবক।
ভাঙচুর করা হয়েছে ওসি ও ইউএনও’র গাড়ি। এ ঘটনায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে পুরো গোয়ালন্দজুড়ে।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজী মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত রাসেল মোল্লা গোয়ালন্দের ঝুট মিস্ত্রির পাড়ার বাসিন্দা আজাদ মোল্লার ছেলে।
জানা যায়, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরপে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরিফ। এক সময় নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। সারা দেশে গড়ে উঠে তার ভক্তানুরাগী।
গত ২৩ আগষ্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান নুরাল পাগল। পরে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট ওপরে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে উঠে তৌহিদি জনতা।
আজ শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কবরটিকে স্বাভাবিক করার দাবিতে গোয়ালন্দ আনছার ক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে তৌহিদী জনতা। একপর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিলটি গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি ও ইউএনও গাড়িতে হামলা করে।
পরে বিক্ষোভ মিছিলটি নুরাল পাগলার মাজারের দিকে এগিয়ে যায়। একই সময় জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিক্ষোভ মিছিল একত্রিত হয়ে ভাঙচুর চালায় নুরাল পাগলার মাজারে। এ সময় মাজারে থাকা ভক্ত অনুসারীদের সাথে দফায় দফায় বাধে সংঘর্ষ। এ ঘটনায় অন্তত শতাধিক আহত বলে দাবি করেছেন তৌহিদী জনতা।
উত্তেজিত জনতার দাবি, বিক্ষোভ মিছিলটি মাজারের সামনে আসলে নুরাল পাগলার ভক্ত অনুসারীরা তাদের ওপর ধারাল অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেল মোল্লা নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, উত্তেজিত জনতা ও নুরাল পাগলার অনুসারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতে সংখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে এ ঘটনায় তার ও ওসির গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থার বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মো. শরীফ আল রাজীব জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশির দশকে নুরাল পাগলা নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিজেকে ইমাম মাহদী দাবি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল।