স্বাস্থ্য কর্মচারী দম্পতির ২৮৪ কোটি টাকা পাচার

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বহুল আলোচিত কর্মকর্তা মো. আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। গতকাল দুদকের উপ-পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১-এ পৃথক দুটি মামলা করেন। মামলা দুটিতে তাদের বিরুদ্ধে ২৮৪ কোটি টাকার বেশি পাচার ও ৩৬ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে দুদকের কড়া নজরদারির মধ্যেই আবজাল দম্পতি অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। কড়া নজরদারির মধ্যে এই দম্পতির সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া চলে যাওয়া ভাবিয়ে তুলছে সংশ্লিষ্টদের।

মামলা দুটি দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে দুদকের উপ-পরচিালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের দুটি মামলার মধ্যে প্রথম মামলায় (মামলা নম্বর-৪) আবজাল ও রুবিনা খানমের বিরুদ্ধে ২৬৩ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার ১৭৫ টাকা মানি লন্ডারিং এবং ৫ কোটি ৯০ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৩১ কোটি ৫১ লাখ ২৩ হাজার ৪৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়ের করা দ্বিতীয় মামলায় (মামলা নম্বর-৫) ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা মানি লন্ডারিং এবং ২ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৮৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৩৬ হাজার ৪৪৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, চলতি বছর মার্চে দুদকের পৃথক দুটি অনুসন্ধান টিম আবজাল হোসেন ও তার স্ত্রী রুবিনা খানমের দাখিলকৃত সম্পদবিবরণী যাচাই শুরু করে। অনুসন্ধানে দাখিলকৃত সম্পদবিবরণীর সঙ্গে প্রকৃত অর্থ-সম্পদের ব্যাপক গরমিল পাওয়া যায়। আবজালের স্ত্রী রুবিনা খানমের মালিকানাধীন রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও গোপন করা হয়। দুদকের এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বামীর অবৈধ আয়কে বৈধ করার পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে রুবিনা ব্যাংক হিসাবসমূহে কখনো এসওডি, কখনো মেয়াদি হিসাব, আবার কখনো সঞ্চয়ী হিসাব অথবা পে-অর্ডার ইস্যু করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত উৎস থেকে ব্যাংক হিসাবে অপ্রদর্শিত ২৬৩ কোটি ৭৭ লাখ ৬৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা জমাকরণ এবং পরে উত্তোলন করে পাচারে জড়িত ছিলেন রুবিনা খানম।

দুদক সূত্র জানায়, আবজাল হোসেন তার সম্পদবিবরণীতে ৬০ লাখ ৭ হাজার ৭২৫ টাকার ঘোষণা দেন। কিন্তু যাচাইকালে দেখা যায়, তিনি ১ কোটি ৬৫ লাখ ৪৩ হাজার ২১৫ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন। দুদক তার ২ কোটি ২৫ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ টাকার সম্পদের খোঁজ পায়। এ ছাড়া আবজালের মালিকানায় থাকা ১ কোটি ২৪ লাখ ২২ হাজার ২৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্যও পাওয়া যায়। দুদকের অনুসন্ধান টিম দেখতে পায়, কয়েকটি ব্যাংক হিসাব থেকে বিভিন্ন সময় ক্লিয়ারিং ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেন আবজাল হোসেন। স্থানান্তর করা অর্থের পরিমাণ ২০ কোটি ৭৪ লাখ ৩২ হাজার ৩২ টাকা। এসব অর্থ তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। কারণ তিনি তার চাকরিজীবনে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সর্বমোট বেতন পান ১৭ লাখ ৪৬ হাজার ৩১২ টাকা। তিনি সব মিলিয়ে বেতন পেতেন ৩০ হাজার টাকা। অথচ চড়তেন হ্যারিয়ার ব্র্যান্ডের জিপে।

অর্থ বাণিজ্য শীর্ষ সংবাদ