গাজার ত্রাণ স্থগিতের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই প্রত্যাহার, বিমান হামলায় ২৬ শহীদ: রয়টার্স সূত্রে ঘটনা-পর্যালোচনা

গাজার ত্রাণ স্থগিতের ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই প্রত্যাহার, বিমান হামলায় ২৬ শহীদ: রয়টার্স সূত্রে ঘটনা-পর্যালোচনা

রয়টার্সের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে গাজায় একটি ট্যাংককে লক্ষ্য করে পরিচালিত হামলার পর তাত্ক্ষণিকভাবে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহ স্থগিতের আদেশ দিয়েছিল ইসরায়েল; কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। ওই ঘটনার পর রোববার রাতে ইসরায়েলের বিমান অভিযান চালানো হয়, যাতে নারী ও শিশুসহ কমপক্ষে ২৬ জন নিহত হয়েছেন—বাংলা ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্স বলছে, গাজার উপত্যকায় নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী হামাসের একজন বা অনেকে ইসরায়েলি ট্যাংকে লক্ষ্য করে ট্যাংক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে; ওই হামলার ফলশ্রুতিতে ঘটনাস্থলেই দুইজন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হন। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েলের সরকার তৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে গাজায় খাবার ও ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করে। একই রাতে পরিচালিত এয়ার স্ট্রাইকে স্থানীয় সূত্রে বলা হয়েছে ২৬ নিরীহ ব্যক্তি নিহত হন।

সংযুক্ত ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিলেন, বিশেষত বিমানহামলার পটভূমিতে ত্রাণ স্থগিত এবং পরে তা প্রত্যাহার নিয়ে টানাপোড়েন সম্পর্কে। এ সময় এয়ারফোর্স ওয়ানে সফরের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মনে করেন যে সাম্প্রতিক ট্যাংক-হামলার এবং তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় হামাস নেতাদের সরাসরি সম্পর্ক স্পষ্ট নয় এবং বিষয়গুলো এখন কঠোরভাবে ও সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে।

রয়টার্স জানিয়েছে, একই সময়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বিশেষ দূত স্টিফ উইটকফ এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনার সোমবার ইসরায়েল সফরে যান; কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চলছে বলে আন্তর্জাতিক সূত্র বলছে।

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা ও তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি ১০ অক্টোবরের পর থেকে যেভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকার ঘোষণা দিয়েছে, তাতে তারা চুক্তি লঙ্ঘনের নির্দেশ দেয়নি। তবে বিবৃতিতে আল-কাসাম ব্রিগেড সতর্ক করে উল্লেখ করেছে যে গাজার স্থানীয় বিভিন্ন হামাস-সমর্থিত গ্রুপগুলো ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় জড়িত থাকতে পারে; তারা বলেছে, গত মার্চের পর থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ওই গ্রুপগুলোর সরাসরি যোগাযোগ নেই।

অপরদিকে, ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেন, তাদের তথ্য মতে গাজায় বর্তমানে অন্তত ৪০টিরও বেশি বিভিন্ন গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। কিছু গোষ্ঠী যুদ্ধবিরতি মেনে থাকলেও বেশিরভাগ এখনো তা মেনে নেয়নি; তিনি আরও বলেন, হামাসকে অস্ত্রবিহীন করার লক্ষ্যে এসব বিদ্রোহী উপগোষ্ঠীর ওপর আলাদা করে মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য ঘিরে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক স্পষ্ট হয়ে উঠে—প্রথমত, গাজার মানবিক অবস্থা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার উপর রাজনৈতিক-মিলিটারি সিদ্ধান্তের সরাসরি প্রভাব পড়ে। ত্রাণ স্থগিতের সিদ্ধান্তগ্রহণ ও তা দ্রুত প্রত্যাহার উভয়কেই ঘিরে প্রশাসনিক ও কূটনৈতিক চাপ পরিলক্ষিত হয়, যা সংকটকালীন সময়ে ত্রাণসেবা প্রদানে স্থায়ীত্বহীনতার ইঙ্গিত দেয়।

দ্বিতীয়ত, স্থানীয় ঐক্যবদ্ধ কমান্ড কাঠামোর অনুপস্থিতি ও বিভিন্ন অস্ত্রসজ্জিত গোষ্ঠীর বিচ্ছিন্ন কার্যক্রম যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নকে দুর্বল করে ফেলছে। ওয়াশিংটনের উদ্ধৃত তথ্য অনুযায়ী গাজায় বহু স্বাধীন গোষ্ঠীর অস্তিত্ব যুদ্ধবিরতির তনত নিয়ে জটিলতা বাড়াচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে উত্তেজনা পুনরায় তীব্র করতে পারে।

তৃতীয়ত, আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার ওপরেও এটি প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ দূতদের ইসরায়েল সফর এবং উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ সংকট প্রশমনে কতটা কার্যকর হবে তা কেবল সময়ই জানাবে; তবে তৎপরতা কেন্দ্রীয়তা লাভ করায় সাময়িক স্থবিরতা কমায় সহায়ক ভূমিকা রাখার সম্ভাবনা রয়েছে।

রয়টার্সকে উদ্ধৃত করে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনে কেবল ঘটনাচক্র ও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। হতাহতদের সনাক্তকরণ, আহতদের পরিস্থিতি বা ঘটনার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর বর্ণনা ছাড়া বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট এখনও প্রকাশিত হয়নি। আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ও পর্যবেক্ষকরা এলাকার ত্রাণ-প্রবাহ নিরাপত্তা ও সরকারি-যুদ্ধদলীয় কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার অনুরোধ জারি করেছে।

সূত্র: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ