বিজয় দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপনে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা

বিজয় দিবস ২০২৫ উদ্‌যাপনে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির চূড়ান্ত রূপরেখা ঘোষণা

ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মহান বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ উদ্‌যাপনের জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বাণী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে। সংবাদপত্রসমূহে প্রকাশিত হবে বিশেষ নিবন্ধ, সাহিত্য সাময়িকী এবং ক্রোড়পত্র।

দিবসটি উদ্‌যাপন শুরু হবে সূর্যোদয়ের পরপরই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে। দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবন, জেলা-উপজেলা কার্যালয় এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সঠিক নিয়ম অনুযায়ী পতাকা উত্তোলন বিষয়ে প্রচার চালাবে।

১৬ ডিসেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সব জেলা ও উপজেলায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। তবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর রাতে আলোকসজ্জা বাতি জ্বালানো নিষিদ্ধ থাকবে।

সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে জাতির বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিদেশি কূটনীতিকরা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করবেন।

জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হবে। সকাল ৯টায় বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে প্রদর্শন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনার আয়োজন থাকবে। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করবে।

দেশের সব জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা আয়োজন করা হবে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতেও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে। স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিদেশি নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিজয় দিবসে চট্টগ্রাম, মংলা, পায়রা ও খুলনা বন্দর, ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ ও বরিশালসহ বিভিন্ন নদীবন্দরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজ সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটেও কোস্টগার্ডের জাহাজ প্রদর্শনীর জন্য রাখা হবে।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে খেলাধুলা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকবে। ফুটবল, কাবাডি, হাডুডু, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটসহ নানা ধরনের খেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বিটিভি, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি চ্যানেলগুলো মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। একই সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের সিনেমা হলে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন স্থানে উন্মুক্তভাবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকবে।

জাদুঘর, চিড়িয়াখানা, শিশু পার্ক ও অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্র শিশুদের জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং তাদের বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে। পাশাপাশি দেশের পর্যটন কেন্দ্রে আয়োজিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, জেলখানা, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, প্রতিবন্ধী কল্যাণ কেন্দ্র, শিশু বিকাশ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বিশেষ প্রীতিভোজের আয়োজন করা হবে।

রাজধানীসহ দেশের বড় শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, সড়কদ্বীপ ও ভবন জাতীয় পতাকা, ব্যানার, ফেস্টুন ও রঙিন নিশানে সজ্জিত করা হবে। ডাক অধিদপ্তর দিবসটি উপলক্ষে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।

সবশেষে, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত, মুক্তিযোদ্ধাদের সুস্বাস্থ্য এবং দেশের শান্তি, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ