ট্রাম্পের বেইজিং সফর: দুই শক্তির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মোড়

ট্রাম্পের বেইজিং সফর: দুই শক্তির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন মোড়

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী বছরের প্রথম দিকে চীন সফরে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। বেইজিংয়ের আমন্ত্রণে এই সফর হতে যাচ্ছে বলে তিনি সোমবার হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, চীন “তাইওয়ান দখল করতে চায় না” – এমন মন্তব্য করে দুই দেশের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ের উত্তেজনাময় বাণিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্কের জটিলতার একটি সম্ভাব্য শান্তির ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ট্রাম্প বলেন, “আমাকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং বিষয়টি মোটামুটি ঠিক হয়ে গেছে। আমি আগামী বছরের প্রথম দিকে সেখানে যাব।“ তিনি আরও জানান, এই মাসের শেষ দিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে ‘ন্যায়সঙ্গত’ বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে।

তবে উল্লেখযোগ্য যে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ইস্যুতে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিল। গত মাসে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, যখন চীন বিরল খনিজ রপ্তানিতে নতুন নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল এবং যুক্তরাষ্ট্র হুমকি দিয়েছিল, তারা চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে। এই উত্তেজনার মাঝে ট্রাম্প সোমবার পরিস্থিতি শান্ত করার বার্তা দিয়েছেন এবং বলেছেন, “দুই দেশকেই একসঙ্গে সমৃদ্ধ হতে হবে।”

বাণিজ্যিক আলোচনার এক দিক হিসেবে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনকে সয়াবিন রপ্তানি করার আহ্বান জানাবে, কারণ বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষকরা তাদের বড় বাজার হারিয়েছেন। এই ঘোষণার পর শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সয়াবিনের দাম এক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ট্রাম্পের ওই মন্তব্য চীনের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের প্রশংসাও বহন করে। তিনি বলেন, “আমার শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো”। যদিও এটি সাম্প্রতিক যুক্তরাষ্ট্র প্রতিরক্ষা দপ্তরের মূল্যায়নের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ, যেখানে পেন্টাগন জানায়, চীন ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের পরিকল্পনা করছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “চীন তাইওয়ান দখল করতে চায় না। তবে অবশ্যই তাদের আগ্রহ রয়েছে, কারণ তাইওয়ান শি জিনপিংয়ের ‘চোখের মণি’। তবে তারা জানে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক শক্তি, তাই তারা আক্রমণ করবে না।”

মার্কিন প্রেসিডেন্ট অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজের সঙ্গে বৈঠকের সময় এই মন্তব্য করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষমতা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেন, “আমাদের সব ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব আছে, কেউ এটা নিয়ে খেলতে পারবে না।”

গত জুনে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ‘শ্যাংরি-লা ডায়ালগ’ সম্মেলনে চীনকে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের জন্য “একটি হুমকি” হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তখন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, “তাইওয়ানকে চীনের বিরুদ্ধে কৌশলগত হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা বা আগুন নিয়ে খেলা উচিত নয় যুক্তরাষ্ট্রের।”

সামগ্রিকভাবে, ট্রাম্পের এই সফর ও মন্তব্যগুলো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন ধাপে প্রবেশের সম্ভাবনার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক ইস্যুগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক এ প্রসঙ্গে আরও স্পষ্টতা এনে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ