এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, দুই ধাপে বাস্তবায়ন

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি, দুই ধাপে বাস্তবায়ন

সরকারি বেতন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা ৭.৫ শতাংশ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে এই ভাতা কার্যকর হবে, যা ন্যূনতম ২ হাজার টাকা হবে। ২০২৬ সালের জুলাই মাস থেকে আরও ৭.৫ শতাংশ বাড়িয়ে সর্বমোট ১৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

মঙ্গলবার শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরারের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষক নেতাদের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে সমঝোতা হয়। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নেওয়া হয়েছে এবং তারা আন্দোলন থেকে সরে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

বৈঠক শেষে শিক্ষক নেতা দেলাওয়ার হোসেন আজিজী সাংবাদিকদের বলেন, “বিষয়টির সুন্দর সমাধান হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামীকাল (২২ অক্টোবর) থেকে শিক্ষকরা ক্লাসে ফিরবেন।”

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা গত কয়েক মাস ধরে বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীতকরণ, উৎসব ভাতা বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন। তারা রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা ১০ দিন অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন।

এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি দল আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনসিপি) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হন এবং শিক্ষকদের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা খালিদ মাহমুদ এক বিবৃতিতে বলেন, “এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের একটি দীর্ঘস্থায়ী দাবি পূরণ হলো। বিভিন্ন মতভেদ ও বিতর্ক সত্ত্বেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ন্যায্য ও টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে গেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এটি কোনো একক সাফল্য নয় বরং শিক্ষা উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং প্রধান উপদেষ্টার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।”

শিক্ষক আন্দোলনের বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিক্ষকদের আন্দোলন আমাদের বাস্তবতা বুঝিয়েছে, আর সরকার দায়িত্বশীলভাবে সাড়া দিয়েছে। আমরা আশা করি, এই সমঝোতা পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায় সূচনা করবে।”

এর আগে ১৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় ৫ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির একটি প্রজ্ঞাপন জারি করলেও তা শিক্ষক নেতৃবৃন্দ প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন এই প্রস্তাব আসায় আন্দোলনকারীরা আলোচনায় রাজি হন।

শিক্ষা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষাখাতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা দূর হতে পারে। শিক্ষকদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।

তবে শিক্ষক সমাজের একটি অংশ এখনো বাড়িভাড়া ভাতার পূর্ণ ২০ শতাংশ দাবি বাস্তবায়নের পক্ষে রয়েছে। তাঁদের মতে, এই সমঝোতা আংশিক হলেও আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জিত হয়নি।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ২০২6-27 অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের সময় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের উৎসব ভাতা বৃদ্ধি ও বেতন কাঠামো পুনর্বিন্যাসের দাবিগুলো পর্যালোচনার আওতায় আনা হতে পারে।

দীর্ঘ আলোচনার পর শিক্ষকদের দাবির আংশিক বাস্তবায়ন শিক্ষক সমাজে স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। যদিও অন্যান্য দাবি এখনো অমীমাংসিত, তবু সরকারের সঙ্গে শিক্ষকদের এই সমঝোতা শিক্ষা ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে শিক্ষকদের পূর্ণ সন্তুষ্টি ও শিক্ষা খাতে দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে কি না।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ