বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনে করে, ২০২৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অর্থবহ, নিরপেক্ষ এবং সর্বজনগ্রহণযোগ্য করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের উদ্দেশে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্য করেন।
“তত্ত্বাবধায়ক কাঠামোতেই জনগণের আস্থা”
মির্জা ফখরুল বলেন, “২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেন অর্থবহ হয় এবং জনগণ যেন সে নির্বাচনে তাদের মতামত সুষ্ঠুভাবে দিতে পারে—সেজন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কার্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাঠামোতে নিয়ে যাওয়া।”
তিনি জানান, নির্বাচন ঘিরে জনগণের আস্থা ফেরাতে প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। “নির্বাচনের আগে প্রশাসন যে নিরপেক্ষ হবে, জনগণকে সেই বার্তাই দিতে হবে,” বলেন তিনি।
প্রশাসন ও বিচার বিভাগ নিয়ে উদ্বেগ
বিএনপি মহাসচিব দাবি করেন, বর্তমান প্রশাসনে এমন কিছু কর্মকর্তা রয়েছেন, যারা অতীতে “ফ্যাসিস্ট শাসনের দোসর” হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, “আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি—যারা সচিবালয়ে এই ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের প্রশাসন থেকে সরাতে হবে। এই ধরনের ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।”
এ সময় তিনি বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। মির্জা ফখরুল বলেন, “যদিও বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান, তবু যেহেতু ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, তাই এই বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ করেছি।”
পুলিশে নিয়োগে নিরপেক্ষতার দাবি
পুলিশ বিভাগে চলমান পদোন্নতি ও নিয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা বলেছি, পুলিশের নতুন নিয়োগ এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেন কোনোভাবেই পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ না করে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।”
তিনি দাবি করেন, যেসব নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলো নির্বাচনের স্বচ্ছতাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। বিএনপি চায় এসব প্রক্রিয়া হোক যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্তভাবে।
বৈঠকের প্রেক্ষাপট ও অংশগ্রহণ
সন্ধ্যা ৬টার পর অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।
বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, পুলিশ ও বিচার বিভাগে নিয়োগ ও রদবদল, এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষ আচরণ নিশ্চিত করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার কাছে একাধিক লিখিত ও মৌখিক প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছে বলে জানা যায়।
প্রেক্ষাপট ও রাজনৈতিক গুরুত্ব
দেশের রাজনীতিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি নিয়ে সরকার, বিরোধীদল এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা ও বিতর্ক চলছে। বিগত নির্বাচনগুলোতে বিরোধীদলগুলো একাধিকবার নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
এ প্রেক্ষাপটে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির এই সংলাপ এবং তত্ত্বাবধায়ক কাঠামোর দাবি রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।