টানা আট দিনের কর্মবিরতির পর আজ (বুধবার) দেশের বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বাড়িভাড়া ভাতা আংশিক বৃদ্ধির ঘোষণা এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারির পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।
জাতীয়করণপ্রত্যাশী এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী জোটের ব্যানারে চলমান এ আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী সেখানে বলেন, “আমাদের যৌক্তিক দাবি আংশিকভাবে মেনে নেওয়ায় আমরা আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছি। আগামীকাল (বুধবার) থেকেই শিক্ষকরা পাঠদান কার্যক্রমে অংশ নেবেন।”
তিনি আরও জানান, আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের যে পাঠদান ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে আগামী শনিবার থেকে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। “আমাদের মন ও দায়িত্ব শ্রেণিকক্ষে—তাই শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমরা দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ,” বলেন তিনি।
গত ১২ অক্টোবর থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এবং শাহবাগ এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীরা। তাদের প্রধান দাবি ছিল বাড়িভাড়া ভাতা ২০ শতাংশে উন্নীত করা, কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ এবং চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০ টাকায় উন্নীত করা।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিক্ষকরা সচিবালয় অভিমুখে মিছিল, শাহবাগ মোড় অবরোধসহ একাধিক কর্মসূচি পালন করেন। এসব কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। ফলে সারাদেশে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
শিক্ষক-কর্মচারীদের এই আন্দোলন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিগোচর হয় এবং সরকারের সঙ্গে একাধিক দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
দীর্ঘ আলোচনার পর, মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, “বিদ্যমান বাজেট পরিস্থিতি বিবেচনায় এমপিওভুক্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা দুই ধাপে ১৫ শতাংশ হারে কার্যকর করা হবে।”
প্রথম ধাপে, ২০২৫ সালের ১ নভেম্বর থেকে মূল বেতনের ৭.৫ শতাংশ (সর্বনিম্ন ২,০০০ টাকা) হারে ভাড়া ভাতা প্রদান শুরু হবে। দ্বিতীয় ধাপে, ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে ভাতা ১৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।
যদিও প্রাথমিকভাবে শিক্ষকরা ২০ শতাংশ বাড়িভাড়া ভাতার দাবি জানিয়েছিলেন, তবে সরকারের এই ধাপে ধাপে কার্যকরের সিদ্ধান্তকে তারা আংশিক সাফল্য হিসেবে মেনে নিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন।
আন্দোলন স্থগিত হওয়ায় আজ থেকে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবারও স্বাভাবিক শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে কোনো বিঘ্ন চান না এবং ক্ষতিপূরণের অংশ হিসেবে অতিরিক্ত ক্লাস পরিচালনা করবেন।
এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো উৎসব ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ দুটি বিষয় ভবিষ্যতে পর্যালোনার আওতায় আনা হবে।
জাতীয়করণের দাবিসহ অন্যান্য দাবিসমূহের ব্যাপারে শিক্ষক নেতারা জানান, সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এগুলোর সমাধান চান তারা। তবে অগ্রগতি না হলে পরবর্তীতে আবার কর্মসূচিতে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি।
এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন আপাতত স্থগিত হলেও তাদের অন্যান্য দাবির ব্যাপারে এখনো পূর্ণ সুরাহা হয়নি। সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন এবং পরবর্তী আলোচনা নির্ভর করবে এই খাতের সামগ্রিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার ওপর। শিক্ষা ব্যবস্থা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে বিষয়ে উভয় পক্ষই এখন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের প্রত্যাশা করছে সংশ্লিষ্টরা।