মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত: কারণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত: কারণ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আজ মন্তব্য করেছেন। হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেছেন, বৈঠকটি তার কাছে “ঠিক মনে হয়নি,” তাই তিনি সেটি বাতিল করেছেন। তবে ভবিষ্যতে এটি আবার আয়োজনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বুধবার হোয়াইট হাউসে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেছি। আমার কাছে এটি ঠিক মনে হয়নি। মনে হয়েছিল না, আমরা যে জায়গায় পৌঁছাতে চাই, সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হবে না।” তিনি আরও যোগ করেন, “তবে ভবিষ্যতে অবশ্যই এমন বৈঠক হবে।”

ট্রাম্প তার বক্তব্যে যুক্ত করেন, “আমি যখনই প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছি, তখনই আলোচনা ভালো হয়েছে। তবে সেই আলোচনা কখনোই ফলপ্রসূ হয়নি।” এর মাধ্যমে তিনি ইঙ্গিত দেন যে, গত সময়ে একাধিকবার পুতিনের সঙ্গে আলাপ হলেও সে আলোচনা থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি।


এদিকে, ট্রাম্পের এই মন্তব্যের আগেই যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। বিশেষ করে, রাশিয়ার দুই বৃহত্তম তেল কোম্পানি—রসনেফট এবং লুকয়েল—এর বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য হিসেবে ট্রাম্প জানান, “এটি একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ। আমরা অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করেছি।”

যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তার “সদিচ্ছার অভাব” ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞাগুলিকে “বিশাল নিষেধাজ্ঞা” হিসেবে বর্ণনা করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, “আমরা আশা করছি, এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হবে না। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, যুদ্ধটি দ্রুত বন্ধ করা।”


ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার কঠোর অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছে। বিশেষত, ইউক্রেনের পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা প্রশ্নে মার্কিন প্রশাসন রাশিয়ার কাছে কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে। যদিও পুতিনের সঙ্গে আলোচনা চলাকালীন কোনো তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল আসেনি, ট্রাম্প ভবিষ্যতে পুনরায় আলোচনা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারে।


নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের ফলে রাশিয়ার তেল শিল্পে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে, যা রাশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সামরিক ক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে, বিশ্বব্যাপী শক্তির বাজারে এই নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। তবে, ট্রাম্পের আশা অনুযায়ী, এই নিষেধাজ্ঞা যদি ইউক্রেনের সংঘাত দ্রুত সমাধানে সহায়ক হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে লাভজনক হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই মন্তব্য এবং পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন এক দৃষ্টিকোণ তৈরি করেছে। যদিও তিনি বৈঠক বাতিল করেছেন, তবুও ভবিষ্যতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাকে তিনি পুরোপুরি অস্বীকার করেননি। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদি পরিস্থিতি অনুকূল হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে আলোচনা আবারও হতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্পের একাধিকবারের আলোচনার ব্যর্থতার পরও, রাশিয়া এবং পশ্চিমা দেশগুলির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি যে সহজ হবে না, তা স্পষ্ট। ইউক্রেন যুদ্ধ, রাশিয়ার সামরিক কর্মকাণ্ড এবং আন্তর্জাতিক নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন রয়েছে, যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং সম্পর্কের উন্নতি চ্যালেঞ্জের মুখে থাকবে।মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সংকটময় অবস্থা বিবেচনায়, পুতিনের সঙ্গে আলোচনা এক দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া হতে পারে, যার ফলাফলও অনিশ্চিত। তবে মার্কিন প্রশাসন আশা করছে, নিষেধাজ্ঞাগুলির মাধ্যমে রাশিয়ার আচরণে পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটবে দ্রুততম সময়ে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ