আফগানিস্তানে তালেবান সরকার দাবি করেছে যে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সীমান্তে চলমান সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে। কাবুলের সরকারি মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ বুধবার (২২ অক্টোবর) আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই তথ্য জানিয়েছেন।
মুজাহিদ বলেন, “আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাতের সময় বিভিন্ন দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আমরা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রভাব ব্যবহার করে আফগানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্যান্য দেশকে উৎসাহিত করবে।”
এছাড়া, মুজাহিদ আরও জানান যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতির জন্য আফগানিস্তান তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। তালেবান সরকারের এই বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা চায়, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের মধ্যস্থতার মাধ্যমে।
পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)-কে আশ্রয় ও সহায়তা প্রদান করছে। তবে কাবুল বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। গত ৯ অক্টোবর পাকিস্তানের বিমান বাহিনী আফগানিস্তানে বিমান অভিযান পরিচালনা করে, যার ফলে টিটিপির শীর্ষ নেতা নূর ওয়ালি মেহসুদ এবং ক্বারি সাইফুল্লাহ মেহসুদসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিহত হন।
পাকিস্তানের ওই বিমান হামলার পর আফগানিস্তান ১১ অক্টোবর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সেনাচৌকিগুলোতে হামলা চালায়, যার ফলে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। পাল্টা জবাব দেয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনীও। এই সংঘাত ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত চলতে থাকে, এবং এতে দুই শতাধিক আফগান সেনা এবং ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হন।
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ১৫ অক্টোবর ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়, এবং তা পরবর্তীতে দুই দেশের সরকারের সম্মতির ভিত্তিতে আরও বাড়ানো হয়। এই মুহূর্তে, দুই প্রতিবেশী দেশ যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে, যদিও সীমান্তে উত্তেজনা এখনও বিদ্যমান।
এলাকা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তার প্রভাবের মাধ্যমে এ অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় আরও কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারে, তবে তা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনতে পারে। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবদুলওয়াহিদ হাকিমি তোলো নিউজকে বলেছেন, “পাকিস্তানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রভাব রয়েছে, তা যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি এই অঞ্চলের জন্য একটি বড় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।”
তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে, এবং এর যথাযথ ব্যবহার আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতির ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।”
পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। বিশেষ করে, আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে। পাকিস্তানের সাথে তালেবানের সম্পর্ক এবং টিটিপি ইস্যু এই উত্তেজনার মূল কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার চেষ্টা, যেহেতু এই অঞ্চলে তার বিপুল রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে, তা যদি সফল হয়, তবে তা আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে। তবে, দুই দেশের মধ্যে আস্থার অভাব এবং ভিন্ন ভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রভাবের কারণে পরিস্থিতি কীভাবে এগোবে, তা এখনও অনিশ্চিত।
আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘাতের প্রেক্ষাপটে তালেবান সরকারের যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতার আহ্বান এবং যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ আঞ্চলিক শান্তির দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। যদিও দুই দেশের মধ্যে অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে, তবুও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় ভূমিকা এই সংঘাতের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।