ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে পশ্চিম তীরের জুদেয়া ও সামারিয়া অঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করার যে বিল পাস হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের গাজা শান্তি পরিকল্পনার জন্য বড় একটি হুমকি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কো রুবিও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গতকাল ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ১২০ আসনের মধ্যে ২৫ জন এমপি পশ্চিম তীরের এই দুটি অঞ্চলকে ইসরায়েলি ভূখণ্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিলটি পাস করেন, যদিও বিলটির বিরোধিতা করেছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার দল লিকুদ পার্টি। তবে, লিকুদ পার্টির কয়েকজন শরিক সরকার সদস্য এই বিলটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বিলটি পাস হওয়ার পর, মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, “আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে এই বিলটির কোনো সমর্থন আমাদের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে না।” তিনি বলেন, “এই বিল গাজার শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করবে, কারণ এটি শান্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর, ইসরায়েল জুদেয়া ও সামারিয়া (পশ্চিম তীর) দখল করে নেয় এবং তখন থেকে এটি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। নতুন আইনটি এই অঞ্চলকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার মাধ্যমে পশ্চিম তীরের দখলকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধান বিরোধী দলের নেতারা, বিশেষ করে লিকুদ পার্টি, এই বিলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, দাবি করে যে এটি শুধুমাত্র রাজনৈতিক পুঁজি আদায়ের উদ্দেশ্যে পাস করা হয়েছে এবং এর ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইসরায়েল ও হামাস গাজা শান্তি চুক্তিতে সম্মতি জানায় এবং ১০ অক্টোবর থেকে সেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও, পশ্চিম তীরের সম্প্রসারণ পরিকল্পনা শান্তি প্রক্রিয়াকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলের পশ্চিম তীরের দখল এবং এই ধরনের বিল পাসকে বিশেষভাবে উদ্বেগের সাথে দেখা হচ্ছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা বারবার ইসরায়েলকে পশ্চিম তীরের উপর তাদের দখল বন্ধ করতে এবং দুই রাষ্ট্রের সমাধান অনুযায়ী শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরায়েলি পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে আসতে পারে, কারণ এটি এমন একটি সময়ে ঘটছে, যখন বিশ্বব্যাপী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের একটি স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এখন পর্যন্ত, ইসরায়েলের এই বিলের পাস হওয়া এবং এর বিরোধিতা করা মূলত রাজনৈতিক খেলার অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে, তবে এর সামগ্রিক প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। পশ্চিম তীরের দখল নিয়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে যে দীর্ঘস্থায়ী দ্বন্দ্ব চলছে, তার মধ্যে এই বিল একটি নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান এবং গাজা শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইসরায়েলের পরবর্তী পদক্ষেপ সারা বিশ্বে গভীর মনোযোগ আকর্ষণ করবে।