গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামানের স্ত্রী কাজলী খাতুন পুলিশের তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার (এসপি) নিশাত এ্যঞ্জেলা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার এবং এক ব্যক্তি রয়েছেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, ওই কর্মকর্তারা এসআই মনিরুজ্জামানকে অন্যায়ভাবে ডেকে নিয়ে তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ আটক রেখেছিলেন।
বাদী কাজলী খাতুন গত ২২ অক্টোবর গাইবান্ধা সদর আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। তার অভিযোগ, ২৫ মার্চ গাইবান্ধা সদর থানার ওসি শাহিনুর ইসলাম তাকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডেকে পাঠান। সেখানে তাকে দীর্ঘ সময় বসিয়ে রেখে চাকরি হারানোর হুমকি দেওয়া হয় এবং তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ও থানায় রাখা ল্যাপটপ জব্দ করা হয়। এরপর পুলিশ সুপারের নির্দেশে এসব ডিভাইস সদর থানার ওসির কাছে আটক রাখা হয়।
মামলার শুনানি শেষে আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার নিচে কোনো কর্মকর্তাকে (পিবিআই) দিয়ে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগের পেছনে পারিবারিক শত্রুতার বিষয়টিও রয়েছে। বাদীপক্ষের আইনজীবী জান্নাতুল ফেরদৌসি লাবনী জানান, এসআই মনিরুজ্জামানের বোনের সাবেক স্বামীর মামাতো ভাই তারেকুজ্জামান তুহিন ফেসবুকে একটি ছবি প্রকাশ করে ছাত্রলীগের ট্যাগ ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন। এর ভিত্তিতে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে হুমকি দেওয়া হয় এবং মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে মনিরুজ্জামানকে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাকে অভিযোগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন। তার মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ সিআইডি কর্তৃক তদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ডাকা হলেও এখন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”
ওসি শাহিনুর ইসলাম বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে করা মামলাটি ভিত্তিহীন এবং আমরা সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছি।”
গাইবান্ধার আদালত পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআই-এর মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত হলে ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে প্রকাশ পাবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এখন পর্যন্ত, পুলিশ সুপার নিশাত এ্যঞ্জেলা এবং অন্যান্য অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গাইবান্ধা সদর থানার এ ঘটনা পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে এবং এটি স্থানীয় প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে। আদালতের তদন্তের ফলাফল এ ঘটনার সঠিক প্রেক্ষাপট সামনে আনবে।


