যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো, পরিবারও অন্তর্ভুক্ত

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো, পরিবারও অন্তর্ভুক্ত

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি মন্ত্রণালয় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো, তার স্ত্রী এবং ছেলেকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। এই নিষেধাজ্ঞা ইস্যুতে গতকাল (শুক্রবার) এক বিবৃতিতে মার্কিন ট্রেজারি মন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন এবং তার নেতৃত্বে কোকেন উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

ট্রেজারি মন্ত্রী বেসেন্টের বিবৃতিতে বলা হয়, “প্রেসিডেন্ট পেত্রো ক্ষমতায় আসার পর থেকে কলম্বিয়ায় কোকেন উৎপাদন বেড়েছে এবং এই বিপুল পরিমাণ কোকেন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাহিত হচ্ছে, যা মার্কিন নাগরিকদের জীবনে বিপদের সৃষ্টি করছে। কোকেন উৎপাদনকারী এবং পাচারকারীদের দমন করার পরিবর্তে, প্রেসিডেন্ট পেত্রো তাদের সমর্থন প্রদান করছেন।”

এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার উল্লেখ করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মাদকের বিপদ থেকে দেশকে রক্ষা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, এবং এজন্য তারা এমন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।

অপরদিকে, পেত্রো এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে দাবি করেন, ট্রেজারি মন্ত্রণালয় মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, “আমার সরকারের অধীনে কোকেন উৎপাদন বেড়েছে এমনটি নয়, বরং তা কমেছে। আমরা যে পরিমাণ কোকেন জব্দ করেছি, তা বিশ্বের ইতিহাসে আর কোনো দেশ করতে পারেনি।”

এই নিষেধাজ্ঞা জারির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের অভিযোগ রয়েছে যে, কলম্বিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক পাচার হচ্ছে, এবং এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী দুটি মাসে সাগরে মাদক পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ১০টি নৌযান ধ্বংস করেছে, যার ফলে অন্তত ৪৩ জন নিহত হয়েছেন।

কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট পেত্রো এর আগেও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিশেষত, গত বছর কলম্বিয়ার মাদক পাচার সম্পর্কিত নৌযান হামলার ঘটনায় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তবে, ট্রাম্প এই অভিযোগের প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, পেত্রোকে “ঠগ” এবং “মাদক পাচারকারী” বলে অভিহিত করেছেন।

এছাড়া, গত সপ্তাহে ট্রাম্প কলম্বিয়াকে মার্কিন সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন এবং উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এই দ্বন্দ্বের পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র পেত্রোকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও ভিসা দেয়নি, যার প্রধান কারণ ছিল পেত্রোর ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে তার কঠোর মন্তব্য।

এদিকে, পেত্রো এক্সে পোস্ট করে লাতিন আমেরিকার বামপন্থি বিপ্লবীদের একটি বিখ্যাত স্লোগান শেয়ার করেছেন, যা হল: “আমরা এক পা-ও পিছু হটব না এবং কখনও হাঁটু গেড়ে বসব না।”

এই পরিস্থিতি কলম্বিয়ার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের এক নতুন মোড় তৈরি করছে, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল হতে পারে।

সূত্র: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ