জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনে বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে প্রার্থী বিবেচনার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনে বিশ্বের সব অঞ্চল থেকে প্রার্থী বিবেচনার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব নির্বাচনে প্রার্থীদের সব আঞ্চলিক গোষ্ঠী থেকে বিবেচনা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সিদ্ধান্ত বিশ্বজুড়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বের প্রতি আগ্রহী দেশগুলোর মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বাস করে আসছিল যে, এইবার মহাসচিবের পদ তাদের অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ।

জাতিসংঘের ১০ম মহাসচিব নির্বাচিত হবেন আগামী বছর, যার মেয়াদ শুরু হবে ১ জানুয়ারি ২০২৭ থেকে। প্রচলিত আঞ্চলিক রোটেশন অনুসারে, এই পদটি ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ থাকার কথা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর বিশ্বাস ছিল যে, জাতিসংঘ মহাসচিবের পরবর্তী পদ তাদের পালা।

যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, “এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণরূপে যোগ্যতার ভিত্তিতে হওয়া উচিত, এবং যত বেশি সংখ্যক প্রার্থী অন্তর্ভুক্ত হয়, তত ভালো।” তিনি যোগ করেন, “এই বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র সব আঞ্চলিক গোষ্ঠী থেকে প্রার্থিতার আহ্বান জানাচ্ছে।”

পানামার জাতিসংঘের উপ-রাষ্ট্রদূত রিকাডো মস্কোসো নিরাপত্তা পরিষদে বলেন, “আমরা আশা করি, এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্ব অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা যথাযথভাবে স্বীকৃতি পাবে—বিশেষত ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে।” তার মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি এই পদের জন্য যোগ্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।

এদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, “আঞ্চলিক রোটেশন কোনো নিয়ম নয়, বরং একটি ঐতিহ্য।” তিনি আরও বলেন, “ল্যাটিন আমেরিকানদের দাবি নৈতিকভাবে শক্তিশালী হলেও, অন্য অঞ্চলের প্রার্থীদের অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই। যোগ্যতা সবার আগে—আমি আপত্তি করবো না যদি একজন নারী যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হন।”

ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টিনা মার্কুস লাসেন বলেন, “৮০ বছর পর সময় এসেছে একজন নারীকে এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে দেখার।” এর মাধ্যমে মহাসচিব নির্বাচনে লিঙ্গ সমতারও একটি প্রশ্ন উঠেছে, যেটি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে।

জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী, মহাসচিব পদে প্রার্থিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে যখন নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য এবং ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদের সভাপতি যৌথভাবে মনোনয়ন আহ্বানপত্র পাঠাবেন। তবে, শেষ পর্যন্ত এই পদে নির্বাচনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয় নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের একযোগী সম্মতির মাধ্যমে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা নিয়ে চলতে পারে। বিশেষত, ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ধারণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে চায়, যেটি বিশ্বের অন্যান্য অংশের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এমন একজন প্রার্থী চায়, যিনি জাতিসংঘের বহুপাক্ষিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার বদলে সংস্থাটিকে আরও সীমিত করতে আগ্রহী।

প্রতিযোগিতা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও, চিলি তাদের সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলেটকে মহাসচিব প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে, কোস্টারিকা সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি রেবেকা গ্রিনস্প্যানকে মনোনীত করার পরিকল্পনা করছে। এতে ল্যাটিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে দুটি শক্তিশালী প্রার্থীর আগমন ঘটছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন এক মাত্রা যোগ করবে।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থিতা আহ্বান ল্যাটিন আমেরিকার জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও তারা একটি ঐক্যবদ্ধ ব্লক হিসেবে প্রবল লবিং করবে। বিশেষত, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি একসঙ্গে কাজ করলে তারা তাদের দাবিকে সমর্থন জোগাতে এবং বিশ্বে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে সক্ষম হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অবস্থান বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলি এই পদটির জন্য তাদের দাবির পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে, তবে নির্বাচনে যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থিতা আহ্বান করা একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। সবকিছু মিলিয়ে, জাতিসংঘের ১০ম মহাসচিব নির্বাচন আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় পরিণত হতে যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ