আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে। সম্প্রতি হংকংয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-পরিচালক থমাস হেলব্লিং এই সাফল্যকে প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করেন।
থমাস হেলব্লিং বলেন, “রিজার্ভের সঞ্চয় আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচির কেন্দ্রীয় লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়, বিশেষ করে যখন একটি দেশ পেমেন্ট ভারসাম্যের চাপের সম্মুখীন থাকে।” তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের পেমেন্ট ভারসাম্যের দুর্বলতা হ্রাস করতে রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হেলব্লিং বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপকে বিশেষভাবে স্বাগত জানান।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক এবং এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে।”
এছাড়াও, থমাস হেলব্লিং উল্লেখ করেন, চলতি মাসেই বাংলাদেশে আইএমএফ-এর একটি মিশন সফর করবে। এই মিশনটি বাংলাদেশের ৫.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্তাবলীর পঞ্চম পর্যালোচনা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবে। তিনি জানান, আইএমএফের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে এবং সেখান থেকে কী ফলাফল আসে, তা পর্যবেক্ষণ করবে।
আইএমএফ আরও মূল্যায়ন করবে যে, বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ বৃদ্ধির উদ্যোগ বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত বিনিময় হার নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না। এ বিষয়ে আইএমএফ-এর অবস্থান স্পষ্ট হতে আরো কিছু সময় লাগবে।
আইএমএফ-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৭.৩৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, যা গত বছরের একই সময় ছিল ১৯.৯৩ বিলিয়ন ডলার। এই উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেশের মুদ্রানীতি এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি নির্দেশ করে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ উদ্যোগ পেমেন্ট ভারসাম্যের ঘাটতি মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে এবং এটি দেশের মুদ্রা স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রিজার্ভ বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান আরও দৃঢ় হবে, যা বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। তবে, এই উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আরও দীর্ঘমেয়াদি নীতি সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনো কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন, বিশেষ করে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ এবং বাণিজ্য ঘাটতির ক্ষেত্রে, তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের এই বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা শক্তিশালী করার লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।
আইএমএফের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
আইএমএফ-এর এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-পরিচালক আরও জানান, তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মনিটরিং করতে থাকবে এবং আইএমএফ-সমর্থিত কর্মসূচি নিয়ে পরবর্তী আলোচনা করবে। এতে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল হতে আরও কিছু সময় লাগবে, তবে বর্তমান পদক্ষেপগুলো সঠিক পথে রয়েছে বলে আইএমএফ আশাবাদী।


