কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

কুষ্টিয়ায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগের পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর নিয়োগ কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রার্থীদের কাছে আগেই প্রশ্ন সরবরাহ এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) সকালে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে চাকরিপ্রত্যাশীরা বিক্ষোভ করেন এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাঁরা দাবি করেন, নিয়োগ পরীক্ষায় ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। সাত ঘণ্টা পর তালা খুলে দেওয়া হলেও, তালা খুলে যাওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের লোকজন বলেন, “তালা খুলে নেওয়া হয়েছে, তবে কে বা কারা এটি খুলে নিয়েছেন তা পরিষ্কার নয়।” আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা তালা খুলে নেননি, এবং এটি হয়তো সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কেউ খুলেছেন।

২০১৮ সালে সিভিল সার্জন কার্যালয় ১১৫টি পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল, কিন্তু নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় এবং ৯৭ জন স্বাস্থ্য সহকারী, ৩ জন পরিসংখ্যানবিদ, ৪ জন স্টোরকিপার, ৫ জন অফিস সহকারী, ৪ জন চালকসহ আরও কিছু পদে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়। নিয়োগ পরীক্ষা শুক্রবার সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হয়, এতে ৮ হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী অংশগ্রহণ করেন।

অভিযোগ উঠেছে যে, বেশ কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী শুক্রবার ভোররাতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন ইমামের বাড়ি ও ক্লিনিকে গিয়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অনেক প্রার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিযোগ ওঠে যে, লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করা হয়েছে এবং সিভিল সার্জনসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

শনিবার দুপুরে সিভিল সার্জন শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ফাঁস হওয়ার বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তিনি দাবি করেন, “প্রশ্নপত্র তৈরি ও প্রস্তুত করতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একাধিক সদস্যের উপস্থিতি ছিল, এবং তাঁদের ফোন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, যাতে প্রশ্নপত্র বাইরে যাওয়ার সুযোগ না থাকে।” তবে, তিনি জানিয়ে দেন যে, অভিযুক্তরা যদি পুলিশি তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হন, তবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল বা পুনঃনির্ধারণের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। তদন্ত শেষে যদি কোনো অনিয়ম প্রমাণিত না হয়, তবে ফলাফল প্রকাশের জন্য কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে। তবে, ততদিন পর্যন্ত সব কার্যক্রম স্থগিত থাকবে।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে একটি তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে। অনিয়মের ব্যাপারে তদন্তের পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখন দেখা যাবে, এই ঘটনায় কারা দায়ী এবং তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সারাদেশ