জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, প্রশাসনে এখনো বিএনপি, জামায়াত এবং পূর্বের আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তির পক্ষ থেকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ দেখা যায়। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এই ধরনের আচরণ চলতে থাকে, তবে বাংলাদেশ একটি বড় রাজনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যেতে পারে, যা দেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত করবে।
শনিবার (২০ অক্টোবর) কিশোরগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সমন্বয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম অভিযোগ করেন, প্রশাসনে বিভিন্ন পক্ষের প্রভাব রয়েছে, যাদের মধ্যে বিএনপি, জামায়াত এবং আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রয়েছেন। তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রশাসনে কিছু মানুষ বিএনপিপন্থি, কেউ জামায়াতপন্থি এবং কেউ পূর্বে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন—এটি খুব স্পষ্টভাবে দেখানো যাচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ চলছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এই আচরণ অব্যাহত থাকলে, একটি বড় রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ঘটতে পারে, এবং তাতে কেউ আর কোনো আশ্রয় বা প্রশ্রয় পাবেন না।”
এনসিপির এই নেতা প্রশাসনকে দলীয় না হয়ে দেশের প্রশাসন হিসেবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আদালতে এখনো আওয়ামী লীগের অনেকে রয়েছেন, যারা সুযোগ পেলেই গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলার আসামিদের জামিন দিয়ে দেন। এটা টাকার বিনিময়ে এবং রাজনৈতিক চাপে ঘটে।” সারজিস আলম বলেন, “স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যদি এসব বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়, তবে দেশের স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হবে এবং নির্বাচন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।”
সারজিস আলম অভিযোগ করেন যে, নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না। তিনি বলেন, “আইনগতভাবে শাপলা প্রতীক পেতে এনসিপির কোনো বাধা নেই, কিন্তু নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে এবং স্বেচ্ছাচারিতা করছে।” তিনি আরও বলেন, “যদি নির্বাচন কমিশন অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা প্রদর্শন না করে, তাহলে আগামী নির্বাচনে তাদের ওপর আমাদের আস্থা রাখতে পারব না।”
সারজিস আলম জুলাই সনদের বাস্তবায়ন এবং প্রয়োজনীয় মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “আগামী বাংলাদেশের জন্য এই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এককভাবে বিএনপি ও জামায়াত নেতৃত্ব দিতে পারবে না, তাদের সঙ্গে এনসিপির উপস্থিতি প্রয়োজন।”
এনসিপির এই নেতা আরও বলেন, “আগামী নির্বাচনে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষ আচরণ না করে, তাহলে তা জাতীয় স্বার্থে বিপদজ্জনক হতে পারে।”
নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে সারজিস আলম জানান, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে এবং ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্যসচিব আহনাফ সাঈদ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কিশোরগঞ্জ সমন্বয় সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল্লাহ হায়দার, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির, দিদার শাহ প্রমুখ।
এ সভায় এনসিপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।


