সাভারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর

সাভারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর

ঢাকার সাভারের আশুলিয়া এলাকায় গত রোববার রাতে বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের পর সিটি ইউনিভার্সিটির বাসে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ঘটনায় অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

ঘটনাটি ঘটে ২৪ অক্টোবর, রোববার রাত ৯টার দিকে আশুলিয়ার খাগান এলাকায়। শিক্ষার্থীরা জানান, সন্ধ্যার পরে সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের হোস্টেল ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’র পাশের এলাকায় বসে ছিলেন। এ সময় এক সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অসতর্কভাবে থুতু ফেললে তা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগলে কথা–কাটাকাটি শুরু হয়।

এ ঘটনায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশি অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের হামলার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং পাল্টাপাল্টি ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

এরপর, সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরবর্তীতে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে ঢুকে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস, একটি প্রাইভেটকারে আগুন দেন এবং আরও দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল, প্রশাসনিক ভবনেও ভাঙচুর চালান।

এ ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তবে, সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন এবং পুরো পরিস্থিতি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, “ঘটনাটি শুরু হয় অসতর্কভাবে থুতু ফেলার কারণে। যদিও পরবর্তীতে সরি বলার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হওয়ার কথা ছিল, তবে রাতের ঘটনায় ভাঙচুরের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান এবং আমরা চেষ্টা করছি পরিস্থিতি শান্ত করার।”

এছাড়া, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়া জানান, “বর্তমানে আমাদের ৯ জন শিক্ষার্থী সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে আটকা পড়েছেন। আমরা দ্রুত পরিস্থিতি সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।”

অন্যদিকে, সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ ঘটনার সূত্রপাত সম্পর্কে নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত করা যায়নি, তবে ছাত্রদের মারামারি থেকে এমন বড় ধরনের সহিংসতা ও ক্যাম্পাসে অগ্নিসংযোগ হওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে না। এটি কোনো পরিকল্পিত ঘটনা মনে হচ্ছে।”

এ ঘটনার পর উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছে, তবে এই ধরনের সহিংসতার ঘটনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি তদন্তের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।

এই সংঘর্ষের ঘটনায় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এমন সহিংসতা কেন ঘটল এবং কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ সমাধান ও সুষ্ঠু যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা আরও একবার সামনে এসেছে।

এছাড়া, সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।

শিক্ষা শীর্ষ সংবাদ সারাদেশ