মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও ইসরায়েলি হামলা থামছে না। একইসঙ্গে, পশ্চিম তীর, সিরিয়া ও লেবাননজুড়ে দেশটির সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকার কারণে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতায় এই আগ্রাসন আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অনেকটাই অনির্দিষ্ট হয়ে উঠেছে। ১০ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর গাজায় কিছুটা চাপ কমলেও, সেখানে ইসরায়েলের আক্রমণ বন্ধ হয়নি। এর পাশাপাশি, লেবানন, সিরিয়া এবং পশ্চিম তীরেও দেশটি হামলা চালাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল রাখতে চাইছে।

পশ্চিম তীর: ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বাহিনীর দমন অভিযান তীব্র হয়ে উঠেছে। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এসব অভিযানে ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পশ্চিম তীরের ভূমি দখল আরও পাকাপোক্ত করার উদ্দেশ্যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও গ্রেপ্তার করছে। দেশটির বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের জলপাই সংগ্রহেও বাধা সৃষ্টি করছে।

এছাড়া, ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ পশ্চিম তীরের ইসরায়েলের সাথে সংযুক্তি করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সমর্থন চেয়েছেন। তিনি পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের “সার্বভৌমত্ব” ঘোষণা করতে আহ্বান জানান, যা “ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিপজ্জনক ধারণা” ঠেকাতে সহায়তা করবে।

সিরিয়া: সীমান্ত লঙ্ঘন ও হামলা

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সিরিয়াতেও ইসরায়েলি হামলা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ সীমান্তে প্রায় প্রতিদিনই সিরিয়ার ভূখণ্ডে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশের খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত ডিসেম্বর মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকার পতনের পর থেকে সিরিয়ার সামরিক অবকাঠামোতে ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে। গত রোববার সিরিয়ার কুনেইত্রা প্রদেশে ইসরায়েলি বাহিনী সাময়িক চেকপোস্ট স্থাপন করে, এবং স্থানীয় রুটি সরবরাহকারীকে আটক করে কিছু সময় পর ছেড়ে দেয়।

লেবানন: যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ

লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের নিয়মিত বিমান ও ড্রোন হামলা চলছে। গত রোববার ইসরায়েল বালবাকের নবি চিত ও দক্ষিণ লেবাননের নাকুরা এলাকায় দুই জনকে হত্যা করেছে। যদিও ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ইসরায়েল ও লেবাননের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তবুও ইসরায়েল এখনও লেবাননের ভেতরে অবস্থান করছে এবং প্রায় প্রতিদিন বোমা হামলা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনী (ইউএনআইএফআইএল) জানিয়েছে, ইসরায়েলি ড্রোন একটি গ্রেনেড নিক্ষেপের কারণে গুলি করে নামানো হয়েছে। তবে, এসব হামলায় এখনো কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

গাজা: যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ ও মানবিক সংকট

গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। ১০ অক্টোবরের পর গাজায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। শনিবার রাতে নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং আরও চারজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, ইসরায়েল রাফাহ সীমান্ত দিয়ে অসুস্থদের দেশত্যাগেও বাধা দিচ্ছে, এমনকি ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদেরও চিকিৎসা নিতে দেওয়া হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতা

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যদিও সম্প্রতি ইসরায়েল সফর করেছেন, তবে তেল আবিবের প্রধান মিত্র ওয়াশিংটন এখনো ইসরায়েলের আঞ্চলিক আগ্রাসন বন্ধ করতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন মূলত গাজার পরিস্থিতিতেই মনোযোগ দিয়েছে, যা ইসরায়েলি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অসামর্থ্যতা প্রদর্শন করছে।

এই অস্থির পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ