২০২২ কাতার বিশ্বকাপে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বানিয়ে সারা বিশ্বের নজর কাড়েন লিওনেল মেসি। সেই শিরোপার পর থেকে নিয়মিতই এক প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি: ২০২৬ বিশ্বকাপে তার খেলা কি সম্ভব? প্রতি বারই মেসি এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের ওপর ছেড়ে দেন। এবারও তার কথায় একই সুর, তিনি জানিয়েছেন, যদি পুরোপুরি ফিট থাকেন, তবে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকবেন।
বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে মেসির প্রধান বাধা বয়স এবং শারীরিক সক্ষমতা। বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী এই ফুটবল তারকা, যিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারে (এমএলএস) খেলছেন, শারীরিকভাবে সক্ষম হলে বিশ্বকাপ খেলতে আগ্রহী। সম্প্রতি ইন্টার মায়ামির সঙ্গে নতুন তিন বছরের চুক্তি করেছেন মেসি। এই চুক্তির পর তার ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা আরও বেশি আলোচনা হয়েছে।
এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মেসি জানিয়েছেন, “এটি একটি অসাধারণ ব্যাপার হবে যদি আমি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারি। আমি পুরোপুরি ফিট থাকতে চাই এবং দলকে সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হতে চাই। তবে আমি এ বিষয়ে প্রতিদিনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবো। যখন আগামী বছর ইন্টার মায়ামির প্রি-সিজন শুরু হবে, তখন আমি নিজেকে মূল্যায়ন করব এবং যদি অনুভব করি যে আমি শতভাগ ফিট, তখনই সিদ্ধান্ত নেব।”
মেসি আরও বলেন, “বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলা সব ফুটবলারের জন্য স্বপ্নের মতো। আমরা গতবার শিরোপা জিতেছি এবং আমাদের শিরোপা ধরে রাখার সক্ষমতা রয়েছে। তাই পুনরায় মাঠে নামা সবসময় আকর্ষণীয় হবে।”
এ পর্যন্ত মেসি পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছেন এবং তার জন্য জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা যেন একটি স্বপ্ন। মেসি বলেন, “বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল। পেশাদার ক্যারিয়ারে মাত্র এই একটি ট্রফি পাওয়ার অপেক্ষা ছিল। ব্যক্তিগতভাবে প্রায় সব কিছু জিতেছি, আর বার্সেলোনার হয়ে যা পেয়েছি, সেটি প্রতিটি ফুটবলারের স্বপ্ন।”
২০০৪ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে অভিষেক হওয়া মেসি এখন পর্যন্ত বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার, ব্যালন ডি’অর আটবার জিতেছেন। পিএসজিতে দুই মৌসুম কাটানোর পর, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, মেসির আমেরিকায় খেলার সিদ্ধান্তের পেছনে ২০২৬ বিশ্বকাপের পরিকল্পনাও রয়েছে। সম্প্রতি আরও তিন বছরের জন্য মায়ামির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া তার ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনাকে আরও জোরালো করেছে।
মেসির জাতীয় দলের হয়ে অভিজ্ঞতাও বিপুল। তিনি আর্জেন্টিনার হয়ে ১৯৫টি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন এবং সর্বোচ্চ ১১৪ গোল করেছেন, যা একটি রেকর্ড। যদি ২০২৬ বিশ্বকাপে মেসি অংশ নেন, তা হলে সেটি হবে তার ষষ্ঠ বিশ্বকাপ।
ফুটবল ক্যারিয়ারের দীর্ঘ সময় ধরে অর্জনগুলি মেসির জন্য স্বীকৃতি হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বকাপ শিরোপা অর্জন করার পর, তিনি নিজের ক্যারিয়ারে আর কোনো বড় লক্ষ্য রাখেন না বলে মনে করেন। তিনি জানান, “বিশ্বকাপ জেতা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। আমি নিজেকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করি যে আমি বিশ্বের শীর্ষ ক্লাবগুলোর হয়ে সফলতা অর্জন করেছি। আর দলের হয়ে বার্সেলোনায় যা পেয়েছি, তা অনেক ফুটবলারের স্বপ্ন থাকে।”
লিওনেল মেসি, যিনি আজকের দিনে ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ অর্জনকারী খেলোয়াড়, ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বিশ্বকাপে তার অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলেও, তার প্রতিশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি যদি পুরোপুরি ফিট থাকেন, তবে আবারও বিশ্বকাপের মঞ্চে আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করতে প্রস্তুত।


