ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে এক সমাবেশে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ঘোষণা করেছেন, দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্রক্ষমতায় এলে প্রথম ১৮ মাসের মধ্যে এক কোটি নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবে। একইসঙ্গে নতুন কলকারখানা স্থাপন ও বন্ধ শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব প্রতিশ্রুতি দেন।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে শিক্ষিত বেকারদের জন্য বেকার ভাতা চালু করা হবে এবং যুব সমাজকে জাতীয় উন্নয়নের প্রধান শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। তিনি উল্লেখ করেন, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা দূর করে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার মাধ্যমে দেশে নতুন উদ্যম সৃষ্টি করা হবে।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, “আগামী দিনে বিএনপি দেশের যুব শক্তিকে জাতীয় মুক্তির হাতিয়ারে পরিণত করবে। বেকারত্বকে জাদুঘরে পাঠিয়ে তরুণদের মুখে হাসি ফোটাবে বিএনপি।” তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আস্থা রেখে আগাম নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সহসভাপতি তারিকুল ইসলাম চঞ্চল। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক এনায়েত উল্লাহ কালাম, হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, সদস্য সচিব আবু হাসনাত বদরুল কবীর, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মালেক এবং যুবদল নেতা আসাদুজ্জামান আসিফ।
বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যুব সমাজের মধ্যে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিএনপি সরকারে এলে শিল্পখাত পুনর্জাগরণের মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে অগ্রাধিকার দেবে।
সমাবেশ শেষে স্থানীয় যুবদল নেতাকর্মীরা একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নিয়ে হালুয়াঘাট পৌর শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির এই প্রতিশ্রুতি মূলত তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করার কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে। দেশে বর্তমানে যুব জনগোষ্ঠীর অনুপাত মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, যাদের কর্মসংস্থানের প্রশ্নটি রাজনৈতিক দলগুলোর অগ্রাধিকারের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকার জনসংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ উচ্চশিক্ষিত তরুণ। শিল্প ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে নতুন বিনিয়োগ এবং প্রশিক্ষণমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই জনগোষ্ঠীকে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষিত কর্মসংস্থানের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে কী ধরনের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো জানানো হয়নি। তবে দলীয় নেতাদের বক্তব্যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, তারা শিল্পোন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) সম্প্রসারণ এবং রপ্তানি-নির্ভর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে চায়।
সমাবেশে উপস্থিত স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেন, হালুয়াঘাটসহ ময়মনসিংহ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। নতুন কর্মসংস্থানের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে তা এ অঞ্চলের অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বিএনপি আসন্ন নির্বাচনী ইশতেহারে এই ধরনের কর্মসংস্থানভিত্তিক প্রতিশ্রুতিকে গুরুত্ব দিতে পারে। এতে তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনায় তাদের ভূমিকা আরও সুসংহত হবে।


