আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইতালির রাজধানী রোমে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে ইকবাল দেওয়ান (৩৮) নামের এক বাংলাদেশি প্রবাসীর আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি মুন্সিগঞ্জ জেলার টঙ্গিবাড়ি উপজেলার রহিমগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালে রোমের মেট্রো এ লাইনে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ইকবাল দেওয়ান। সকাল প্রায় ৯টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। সহযাত্রীদের সহায়তায় তাকে দ্রুত উদ্ধার করে নিকটবর্তী সান জোভান্নি হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।
প্রবাসে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী ইকবাল দেওয়ান কর্মজীবনের পাশাপাশি স্থানীয় প্রবাসী সমাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা গেছে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তার অকাল মৃত্যুতে ইতালিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় প্রবাসীরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে ইতালিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু বা হৃদ্রোগজনিত মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে একাধিক বাংলাদেশি প্রবাসীর মৃত্যু ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সামাজিক সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, প্রবাসজীবনে অতিরিক্ত পরিশ্রম, মানসিক চাপ, ঘুম ও খাদ্যাভ্যাসের অনিয়ম, এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি অবহেলার কারণে হৃদ্রোগের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক প্রবাসী কর্মজীবনের ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর সুযোগ পান না, যা ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা প্রবাসীদের সচেতন জীবনযাপন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক চাপজনিত অসুস্থতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এসব সমস্যা প্রতিরোধে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসী সংগঠনগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
ইকবাল দেওয়ানের মৃত্যুর পর তার সহকর্মী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তারা মৃতদেহ দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণেরও আহ্বান জানিয়েছেন। তবে লাশ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি ও সময়সূচি সম্পর্কে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
প্রবাসী কল্যাণ দপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দূতাবাসের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মরদেহ দ্রুত দেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া, আইনি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর বাংলাদেশে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা হবে।
ইকবাল দেওয়ানের অকাল মৃত্যু ইতালিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জীবনযাপন ও স্বাস্থ্যসচেতনতার বিষয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সামাজিক সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের মৃত্যু রোধে প্রবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজতর করা ও সচেতনতামূলক উদ্যোগ জোরদার করা এখন সময়ের দাবি।


