ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ১৮ ফিলিস্তিনি নিহত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর সর্বশেষ বিমান ও স্থল হামলায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) স্থানীয় সময় রাতের দিকে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু রাফাহ সীমান্তে এক ইসরায়েলি সৈন্য আহত হওয়ার পর প্রতিশোধমূলক হামলার নির্দেশ দেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অনেকে, যাদের অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলার ফলে কয়েকটি আবাসিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এক সামরিক বৈঠকে এই হামলার অনুমোদন দেন বলে সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “ইসরায়েলি সেনাদের ওপর আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে নির্দিষ্ট হামলা চালানো হয়েছে।” তবে হামলার ফলে বেসামরিক হতাহতের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

অন্যদিকে, হামাসের সশস্ত্র শাখা কাসাম ব্রিগেডস ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। তারা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে গাজার বেসামরিক এলাকাগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, “এই হামলা যুদ্ধবিরতির স্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা চুক্তির শর্ত মেনে চলছি, কিন্তু ইসরায়েল তা করছে না।”

হামাস আরও জানায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ এলাকায় সংঘটিত ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বড় ধরনের উস্কানি অব্যাহত থাকলে গাজায় নিখোঁজ জিম্মিদের মরদেহ উদ্ধারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। বর্তমানে ১৩ জন নিখোঁজ বন্দির মরদেহ উদ্ধার কাজ স্থগিত রাখা হয়েছে বলে হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, চলমান যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৯৪ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এ ছাড়া খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি ত্রাণ সরবরাহ কঠোরভাবে সীমিত রাখার অভিযোগও তোলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের মতে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে মানবিক পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাচ্ছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে.ডি. ভ্যান্স এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “ছোটখাটো সংঘর্ষ ঘটতে পারে, তবে আমরা বিশ্বাস করি যুদ্ধবিরতি সামগ্রিকভাবে বহাল রয়েছে।” তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ইসরায়েল ও হামাস উভয় পক্ষই উত্তেজনা না বাড়িয়ে শান্তি বজায় রাখার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

হামাস নেতা সুহাইল আল-হিন্দি জানান, গাজায় নিখোঁজদের মরদেহ উদ্ধারে তারা বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং এই বিলম্বের জন্য ইসরায়েলের সামরিক অভিযানই দায়ী। তিনি বলেন, “ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলার কারণে উদ্ধার কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে, ফলে নিখোঁজদের মরদেহ উদ্ধারে বিলম্ব হচ্ছে।”

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সাম্প্রতিক হামলা গাজায় চলমান যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। সামরিক উত্তেজনা পুনরায় বৃদ্ধি পেলে গাজার মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এর আগে গাজায় অবরোধ ও হামলার পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

পর্যবেক্ষকদের ধারণা, উভয় পক্ষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি এবং পুনঃপুন লঙ্ঘনের ফলে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। গাজায় সহিংসতা বন্ধ না হলে অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও মানবিক পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক মহল।

আন্তর্জাতিক