বায়ুদূষণে বিশ্বের নবম দূষিত শহর ঢাকাঃ অস্বাস্থ্যকর বাতাসে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে

বায়ুদূষণে বিশ্বের নবম দূষিত শহর ঢাকাঃ অস্বাস্থ্যকর বাতাসে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে

পরিবেশ ডেস্ক

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সর্বশেষ পরিমাপ অনুযায়ী, বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ঢাকার বায়ুমান সূচক (AQI) ছিল ১৫৫, যা ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ। এই সূচক অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকার বাতাস সবার জন্যই ক্ষতিকর এবং বিশেষত শিশু, বয়স্ক ও শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

আইকিউএয়ারের বৈশ্বিক বায়ু মান পর্যবেক্ষণ তালিকায় ঢাকার অবস্থান এখন নবম। বিশ্বের মধ্যে ঢাকার চেয়ে বেশি দূষিত শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে— পাকিস্তানের লাহোর, ভারতের দিল্লি, চীনের বেইজিং, পাকিস্তানের করাচি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, চীনের উহান, নেপালের কাঠমান্ডু এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা।

বায়ুর মান ও স্বাস্থ্যঝুঁকি

আইকিউএয়ারের সূচক অনুযায়ী, ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে AQI স্কোর ‘অস্বাস্থ্যকর’ বায়ুকে নির্দেশ করে। এই মাত্রার বায়ুদূষণে দীর্ঘসময় অবস্থান করলে ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, বিশেষত সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকি আরও বেশি। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এমন অবস্থায় শিশু ও বয়স্কদের বাইরে যাওয়া সীমিত করা উচিত। যাদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে, তাদের বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের দূষিত বাতাসে দীর্ঘমেয়াদি সংস্পর্শ শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হাঁপানি, ব্রংকাইটিস, হৃদরোগ এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো জটিল অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। দূষণের মাত্রা বেড়ে গেলে হাসপাতালগুলোতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়।

প্রধান দূষণ উৎস

বায়ুদূষণের পেছনে ঢাকায় অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM2.5) অন্যতম প্রধান কারণ। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা জানান, নির্মাণকাজের ধুলা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং ইটভাটার নির্গমন ঢাকার বায়ুদূষণের মূল উৎস। রাজধানীতে নির্মাণ প্রকল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি, সড়কে পুরনো ও অদক্ষ যানবাহনের চলাচল, এবং শিল্প এলাকার নির্গমন নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিওই) পূর্ববর্তী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শীতকালে ধুলাবালি ও যানবাহনের নির্গমন বাড়ায় বায়ুদূষণ চরমে পৌঁছে। এ সময় বায়ুর গতি কম থাকায় ধুলাবালি ও দূষণ জমে থেকে শহরের বাতাসকে ভারী করে তোলে।

সতর্কতা ও করণীয়

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, বায়ুর মান খারাপ থাকলে সাধারণ জনগণকে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

  • সংবেদনশীল গোষ্ঠীর সদস্যরা (শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তি) প্রয়োজন না হলে বাইরে না যাওয়া উচিত।

  • বাইরে বের হলে উচ্চমানের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

  • দূষিত বাতাস ঘরে প্রবেশ ঠেকাতে জানালা বন্ধ রাখা এবং প্রয়োজনে ঘরে এয়ার পিউরিফায়ার ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • খোলা স্থানে শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।

নীতিগত পদক্ষেপের প্রয়োজন

পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করেন, টেকসই সমাধানের জন্য নগর পরিকল্পনা, যানবাহন নির্গমন নিয়ন্ত্রণ, ইটভাটা সংস্কার এবং নির্মাণক্ষেত্রে ধুলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর নীতি গ্রহণ অপরিহার্য। ইটভাটায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, পুরনো গাড়ি অপসারণ এবং নির্মাণসামগ্রী পরিবহনে নির্দিষ্ট মানদণ্ড নিশ্চিত করা গেলে দূষণ কমানো সম্ভব।

বায়ুদূষণ এখন ঢাকায় জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ উভয়ের জন্যই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সাম্প্রতিক পরিমাপের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে শীত মৌসুমে দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে, যা নগরবাসীর জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বয়ে আনবে।

পরিবেশ