অভিনয়ের বাইরেও সাহসিকতার জন্য কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্র

অভিনয়ের বাইরেও সাহসিকতার জন্য কিংবদন্তি ধর্মেন্দ্র

বিনোদন ডেস্ক

বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা ধর্মেন্দ্র শুধু পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্বের প্রতীক। সম্প্রতি ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ পুরী এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতার জীবনের কিছু অজানা দিক তুলে ধরেন, যা ধর্মেন্দ্রর পর্দার বাইরের দৃঢ় মানসিকতা ও মানবিক দিককে নতুনভাবে পরিচিত করে দেয়।

সত্যজিৎ পুরী জানান, অতীতে যখন মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড সিনে জগতের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিল, তখন অনেক অভিনেতা ভয় ও আতঙ্কে দিন কাটাতেন। কিন্তু ধর্মেন্দ্র ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের মানুষ। তিনি কখনও হুমকি বা ভয়ের কাছে নতি স্বীকার করেননি। পুরীর ভাষায়, “সেই সময় আন্ডারওয়ার্ল্ডের ফোন পেলে সবাই চুপ হয়ে যেতেন। কিন্তু ধর্মেন্দ্র তাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘তোমাদের সঙ্গে দশজন লোক আছে, কিন্তু আমার সঙ্গে আছে সেনাবাহিনী। আমি একজনকে ডাকলে ট্রাক বোঝাই মানুষ লড়তে আসবে।’”

পরিচালক আরও জানান, একবার এক ব্যক্তি ধর্মেন্দ্রকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মুহূর্তের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এমন ঘটনায় ভীত না হয়ে নিজের উপস্থিত বুদ্ধি ও স্থৈর্যের মাধ্যমে তিনি বিপদ কাটিয়ে ওঠেন। সত্যজিৎ বলেন, “আজকের অনেক অভিনেতা নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া বাইরে যান না, কিন্তু সেই সময় ধর্মেন্দ্র কিংবা বিনোদ খান্নার মতো তারকারা কোনো দেহরক্ষী ছাড়াই মুক্তভাবে চলাফেরা করতেন।”

অভিনেতার পেশাদারিত্ব ও প্রাণীর প্রতি সহমর্মিতার একটি ঘটনাও উল্লেখ করেন পুরী। তিনি জানান, ধর্মেন্দ্র অভিনীত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র গুলামি–এর শুটিংয়ের সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে। দৃশ্য অনুযায়ী, অভিনেতাকে একটি ঘোড়ায় চড়ে মার্বেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হতো। ঘোড়াটি সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করে ফেলায় জায়গাটি পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। ইউনিটের কেউ বিষয়টি খেয়াল না করলেও ধর্মেন্দ্র শটের সময় ঘোড়াটিকে চালাতে শুরু করেন। ঘোড়ার পা পিছলে গেলে তিনি পড়ে গিয়ে আহত হন, তবে দ্রুত নিজেকে সামলে নেন এবং শুটিং শেষ করেন।

ঘোড়াটির আঘাত পাওয়ায় মন খারাপ হয়ে যায় ধর্মেন্দ্রর। তিনি সেটে উপস্থিত ঘোড়ার মালিককে ২০০ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেন এবং প্রাণীটির যত্ন নেওয়ার নির্দেশ দেন। পরিচালকের মতে, “ধর্মেন্দ্র শুধু অ্যাকশন দৃশ্যের জন্যই নন, প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি ও দায়িত্ববোধের কারণেও তিনি আলাদা ছিলেন।”

সত্যজিৎ পুরী, যিনি গুলামি সিনেমায় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছিলেন, বলেন, ধর্মেন্দ্র, সানি দেওল ও ববি দেওল—এই তিন প্রজন্মের শিল্পীরা একইরকম পরিশ্রমী ও সাহসী। তাদের পরিবারে সাহসিকতা ও সম্মানের ঐতিহ্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে প্রবাহিত হচ্ছে।

ধর্মেন্দ্রর অভিনয়জীবনের প্রায় ছয় দশকের পথচলায় তিনি অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন—শোলে, সীতা অউর গীতা, ধরম ভীর, চুপকে চুপকেসহ আরও অনেক চলচ্চিত্রে তার অনন্য উপস্থিতি আজও বলিউড ইতিহাসে আলোচনার বিষয়। তবে পরিচালক সত্যজিৎ পুরীর এই সাক্ষাৎকারে প্রকাশিত ঘটনাগুলো প্রমাণ করে, পর্দার বাইরেও ধর্মেন্দ্র ছিলেন ঠিক ততটাই সাহসী, মানবিক ও দৃঢ়চেতা, যতটা তিনি ছিলেন তার চলচ্চিত্রের চরিত্রে।

বিনোদন